বাংলা ও বাঙালির কাছে গোপাল পাঁঠা বেশ পরিচিত নাম। মধ্য কলকাতার বাসিন্দা ছিলেন। আসল নাম গোপাল মুখোপাধ্যায়। ১৯৪৬ সালে ক্যালকাটা কিলিংয়ের সময় এই গোপাল পাঁঠাই হয়েছিলেন হিন্দু বাঙালিদের পরিত্রাতা। সম্প্রতি বিবেক অগ্নিহোত্রী বেঙ্গল ফাইলস নামে একটি ছবি পরিচালনা করেছেন। সেই ছবিতে গোপাল পাঁঠার চরিত্রটি তুলে ধরা হয়েছে। কিন্তু ছবিতে তাঁকে একজন সাধারণ কসাই বলে পরিচয় করানো হয়েছে। যা নিয়ে প্রবল ক্ষুব্ধ গোপাল পাঁঠার পরিবার।
ইতিমধ্যেই গোপালের নাতি শান্তনু মুখোপাধ্যায় পুলিশের কাছে পরিচালকের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছেন। দাবি করেছেন, অবিলম্বে তাঁকে ক্ষমা চাইতে হবে।
প্রশ্ন হল, বাংলার রাজনীতিতে গোপালের ভূমিকা কী ছিল? কী কারণে গোপাল মুখোপাধ্যায় থেকে তিনি গোপাল পাঁঠা হয়ে উঠলেন?
নাতি শান্তনুর কথায়, অনুশীলন সমিতির কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তাঁর দাদু। নিয়মিত কুস্তি শিখতেন। পাশাপাশি চালাতেন দুটি পাঁঠার মাংসের দোকান। এলাকায় তিনি অসীম সাহসী এক যুবক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তাই সকলেই বলতেন গোপালের বুকের পাটা আছে। কিন্তু সে সময় এলাকার হিন্দিভাষী মানুষের মুখে বুকের পাটা পাট্টায় পরিণত হয়। একইসঙ্গে তার পেশা এবং নেশা দুই মিলে হয়ে যায় গোপাল পাঁঠা।
এবার দেখা যাক বাংলার রক্তক্ষয়ী রাজনীতিতে গোপালের ভূমিকা কি ছিল? ১৯৪৬ সালের ১৫ অগস্ট তৎকালীন বাংলার প্রধানমন্ত্রী হুসেন সুরাবর্দি এবং মুসলিম লিগ দেশ ভাগের ডাক দেয়। তাদের দাবি ছিল, কলকাতাকে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। নিজেদের লক্ষ্য পূরণে মুসলিম লিগ বাংলায় আগুন জ্বালানোর ডাক দেয়। যার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে ছিলেন গোপাল পাঁঠা। মুসলিম লিগের বিস্ফোরক মন্তব্যের পরেই কলকাতার শহরজুড়ে শুরু হয় খুনোখুনি। হিন্দুদের নির্বিচারে খুন করতে থাকে মুসলিম বাহিনী। জ্বালিয়ে দেওয়া হয় হিন্দুদের একের পর বাড়ি। লুটপাট হয় সমস্ত দোকানপাট। আতঙ্কে ঘরবন্দি হয়ে পড়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ। প্রতিবাদে ফুঁসে ওঠেন গোপাল। তিনি প্রথমে নিজের এলাকায় তাঁর ঘনিষ্ট কিছু লোককে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। গোপাল তাঁর ঘনিষ্ঠদের নির্দেশ দেন, তারা যেন হাতে অস্ত্র তুলে নেয়। কোনও মুসলিম যদি একজন হিন্দুকে মারে তবে তারা যেন ১০ জনকে হত্যা করে বদলা নেয়। একই সঙ্গে গোপালের নির্দেশ ছিল, কোন মুসলিম বৃদ্ধ, বৃদ্ধা মহিলা ও শিশুর গায়ে যেন এতটুকু আঁচড় না লাগে।
গোপাল বুঝতে পেরেছিলেন কলকাতাকে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা হচ্ছে। তাই তিনি তার তীব্র প্রতিবাদ করেছিলেন। রুখে দাঁড়িয়ে ছিলেন। গোপালের এই কঠিন কঠোর প্রতিরোধে মুসলিম লিগ বুঝতে পারে, কোনওভাবেই তাদের পরিকল্পনা সফল হবে না। শেষ পর্যন্ত তারা রণে ভঙ্গ দেয়।
গোপালের নাতি শান্তনুর দাবি, বেঙ্গল ফাইলস ছবিতে গোপালের ভূমিকার সঠিক মূল্যায়ন হয়নি। তাঁকে বাংলা ও বাঙালির পরিত্রাতা হিসেবে না দেখিয়ে সামান্য একজন কসাই বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এটা কোনও অবস্থাতেই মেনে নেওয়া যায় না। একজন প্রাতস্মরণীয় ব্যক্তির চরিত্রকে এভাবে বিকৃত করে দেখানোর অভিযোগে বেঙ্গল ফাইলসের পরিচালক বিবেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন গোপালের নাতি শান্তনু।