অভিনব সাফল্যের পর আরও বড় লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো। সম্প্রতি গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশু শুক্লা আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রে ১৮ দিনের ঐতিহাসিক ভ্রমণ সম্পন্ন করেছেন। এর পরেই শুরু হয়েছে নতুন প্রস্তুতি। আগামী ২৩ আগস্ট “জাতীয় মহাকাশ দিবস” দ্বিতীয়বারের মতো উদযাপনের জন্য তোড়জোড় চলছে দেশজুড়ে।
এবারের বছরকে ইসরো ঘোষণা করেছে “গগনযান বর্ষ”। ইসরো চেয়ারম্যান ভি. নারায়ণন একান্ত সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, এই বছরই ডিসেম্বর মাসে প্রথম মানববিহীন গগনযান মিশন মহাকাশে যাবে। সেই মিশনে থাকবে ভারতের তৈরি মানবসদৃশ রোবট “ব্যোমিত্র”। এর কাজ হবে মহাকাশে মানুষের শারীরবৃত্তীয় প্রতিক্রিয়া অনুকরণ করে তথ্য পাঠানো। এরপর আরও দুটি মানববিহীন মিশন শুরু হবে ২০২৬ সালে। সব কিছু পরিকল্পনা মতো এগোলে ২০২৭ সালের প্রথম দিকেই মহাকাশে যাবে ভারতের প্রথম নভোচারী দল।
ইসরো এবার বাজারে আনছে প্রথম শিল্প-নির্মিত রকেট PSLV N1। এটি তৈরি করেছে হিন্দুস্তান অ্যারোনটিকস লিমিটেড (HAL) ও লারসেন অ্যান্ড টুবরো (L&T)। এই রকেটের মাধ্যমে উৎক্ষেপণ করা হবে এক অত্যাধুনিক প্রযুক্তি প্রদর্শনী স্যাটেলাইট, যেখানে ইলেকট্রিক প্রপালশন ও কোয়ান্টাম প্রযুক্তি পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করা হবে। ইসরোর এই বছরের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ মিশনের মধ্যে রয়েছে –SSLV মিশন, Oceansat , NAVIC NVS-03 , Bluebird 2 । এটি ডিসেম্বর ২০২৫ থেকে জানুয়ারি ২০২৬-র মধ্যে সম্পন্ন হবে।
এই বছরের শুরুতেই নাসার সঙ্গে যৌথভাবে তৈরি NISAR স্যাটেলাইট সফলভাবে উৎক্ষেপণ করেছে ইসরো। এই সাফল্যে গোটা দলের আত্মবিশ্বাস আরও বাড়িয়েছে। চেয়ারম্যান ভি. নারায়ণন জানিয়েছেন, “এই সাফল্য আমাদের ভীষণভাবে অনুপ্রাণিত করেছে। টিম এখন আগের থেকেও অনেক বেশি উদ্যমে কাজ করছে।”
গগনযান প্রকল্প ভারতের জন্য সবচেয়ে জটিল ও গুরুত্বপূর্ণ। এখানে তৈরি হচ্ছে বিশেষ লাইফ সাপোর্ট সিস্টেম, ক্রু মডিউল, নিরাপত্তা প্রযুক্তি, যা আন্তর্জাতিক মানে পরীক্ষিত হতে হবে। তবুও আইএসআরও আত্মবিশ্বাসী যে তারা নির্ধারিত সময়ে এটি সম্পন্ন করতে পারবে।
নরেন্দ্র মোদির উদ্যোগে মহাকাশ খাতে নতুন সংস্কারের ফলে এখন শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলিও মহাকাশ গবেষণায় সরাসরি যুক্ত হচ্ছে। HAL ও L&T-এর মতো সংস্থা ইতিমধ্যেই রকেট তৈরির দায়িত্ব নিয়েছে। এর ফলে ভারতীয় মহাকাশ খাত আরও দ্রুত এবং প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠছে। সব মিলিয়ে, ২০২৫ সাল হবে আইএসআরও-র অন্যতম ব্যস্ততম বছর। এক বছরে নয়টি উৎক্ষেপণ, মানববিহীন গগনযান মিশন, শিল্পনির্মিত প্রথম রকেট, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৃহৎ বাণিজ্যিক স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ, সবই ভারতকে আন্তর্জাতিক মহাকাশ শক্তির নিরিখে আরও উঁচুতে নিয়ে যাবে।
