নয়াদিল্লিতে রুশ দূতাবাস বুধবার জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সতর্কবার্তা উপেক্ষা করেও ভারতকে তেল সরবরাহ চালিয়ে যেতে চায় মস্কো। তারা আশা করছে শিগগিরই ভারত, রাশিয়া ও চিনের মধ্যে বাণিজ্য ও পারস্পরিক কূটনৈতিক সম্পর্ক সংক্রান্ত ত্রিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, আগামী ২৭ আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি হওয়া ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত আরও ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনার শাস্তি হিসেবে এই পদক্ষেপ করা হয়েছে। বর্তমানে ভারতের পেট্রোলিয়াম পণ্যের মোট আমদানির ৩৫ শতাংশ রাশিয়া থেকে আসে, যা ইউক্রেন যুদ্ধের আগে ছিল মাত্র ০.২ শতাংশ।
নয়াদিল্লিতে রুশ দূতাবাসের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত রোমান বাবুশকিন বলেন, “রাজনৈতিক পরিস্থিতি সত্ত্বেও আমরা পূর্বানুমান করতে পারি যে রাশিয়া থেকে ভারতের তেল আমদানির পরিমাণ একই থাকবে।” তিনি আশা প্রকাশ করেন, ভারত ও রাশিয়া জাতীয় স্বার্থে ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতি আরোপের মোকাবিলা করতে সক্ষম হবে।
রাশিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী দেনিস মান্তুরভ জানিয়েছেন, ভারতকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহেরও সম্ভাবনা দেখছে মস্কো। তিনি বলেন, “আমরা এখনও অপরিশোধিত তেল, তেলজাত পণ্য ও কোকিং কয়লা পাঠাচ্ছি। ভারতকে এলএনজি রফতানিরও সম্ভাবনা রয়েছে।” মান্তুরভ আরও জানান, পারমাণবিক জ্বালানি খাতেও ভারতের সঙ্গে সহযোগিতা বাড়ানোর প্রত্যাশা করছে রাশিয়া।
এদিকে ভারত-আমেরিকা বাণিজ্য আলোচনা আপাতত ভেস্তে গেছে কৃষি ও দুগ্ধজাত পণ্যের বাজার আমেরিকার জন্য খুলে না দেওয়ার প্রশ্নে এবং রাশিয়ার তেল কেনার ইস্যুতে। ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা ভারতীয় পণ্যের মোট রফতানিশুল্ক দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশে।
ভারতের বিদেশ মন্ত্রক এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনও মন্তব্য করেনি। তবে এর আগে তারা জানিয়েছিল, রুশ তেল কেনার কারণে শুধুমাত্র ভারতকে টার্গেট করা মার্কিন সিদ্ধান্ত “অত্যন্ত দুঃখজনক”।
রাশিয়ার ডেপুটি ট্রেড কমিশনার ইয়েভগেনি গ্রিভা বলেন, ভারতের জন্য রাশিয়া থেকে তেল কেনা “অত্যন্ত লাভজনক”, তাই ভারত রাশিয়া থেকে তেল আমদানি বন্ধ করতে চাইবে না। তিনি জানান, গড়ে ভারতীয় ক্রেতাদের ৫–৭ শতাংশ ছাড় দেয় রাশিয়া। তেল সরবরাহ অব্যাহত রাখতে বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, ভারতীয় ব্যাংকগুলোতে আটকে থাকা বিলিয়ন ডলারের জটিলতা সমাধানের পর রাশিয়া এখন রুপিতে, অর্থাৎ ভারতীয় টাকায় অর্থ গ্রহণ শুরু করেছে।
এছাড়াও রাশিয়ার তরফে চিনকে সঙ্গে নিয়ে ভারতের সঙ্গে ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের প্রস্তাব, বিশ্ব রাজনীতির সমীকরণে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ওয়াশিংটন ও নয়াদিল্লির মধ্যে উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে সাম্প্রতিক সময়ে নয়াদিল্লি ও বেজিং-এর মধ্যে উচ্চপর্যায়ের সফর হয়েছে। নয়াদিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে বৈঠক হয়েছে চিনের বিদেশমন্ত্রীর। আগস্টের শেষে সাত বছর বাদে চিন সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। এসসিও সামিট-এ যোগ দেওয়ার পাশাপাশি চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিংপিং-এর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে তাঁর। এতে ২০২০ সালে লাদাখের গালওয়ানে সীমান্ত সংঘর্ষে ক্ষতিগ্রস্ত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক মেরামতের আশা জেগেছে প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে।
কিন্তু তার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একতরফা শুল্কনীতি ও ‘বসগিরি’-র বিরুদ্ধে ভারত, রাশিয়া আর চিন, বিশ্বের প্রথম পাঁচ শক্তিধর দেশের মধ্যে তিনটি দেশের একজোট হওয়ার উদ্যোগ। যে উদ্যোগকে “বৃহত্তর ইউরেশিয়ান জোট” হিসেবে আখ্যা দিচ্ছে সংশ্লিষ্ট মহল। যদি তা হয়, তা হলে ট্রাম্পের হাতে হ্যারিকেন ধরাতে খুব বেশি বেগ পেতে হবে না। দাদাগিরি বন্ধ হয়ে যাবে রিপাবলিকান জায়ান্টের।