সক্রিয় ক্রিকেট থেকে চেতেশ্বর পুজারার নিঃশব্দ বিদায়কে মেনে নিতে পারছেন না তাঁর ভক্তকুল। বিদায়ের খবরে বিসিসিআই ও তার নির্বাচক মণ্ডলীর উদ্দেশে কটাক্ষ করলেন কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর। নিজের এক্স হ্যান্ডেলে পুজারার ”অসম্মানজনক” বিদায় ঘিরে তোপ দেগেছেন প্রবীণ কংগ্রেস নেতা। লিখেছেন, চেতেশ্বর পুজারার অবসরের জন্য আমি দুঃখ প্রকাশ না করে পারছি না”।
২ বছরের বেশি সময় সৌরাষ্ট্রের ডানহাতি ব্যাটার একরকম উপেক্ষিতই ছিলেন জাতীয় ক্রিকেট দলে। হয়ত সেই কারণেই রবিবার ক্রিকেটের সব ধরনের ফর্ম থেকে অবসর নেওয়ার কথা জানিয়েছেন তাঁর এক্স হ্যান্ডেলে। পোস্টে লিখেছেন, “দেশের জার্সি পরা, একসঙ্গে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া এবং মাঠে নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা, এর প্রকৃত অর্থ কী তা ভাষায় প্রকাশ করা অসম্ভব। কিন্তু সমস্ত ভাল জিনিসেরই একটা দাঁড়ি টানা দরকার। তাই অপরিসীম কৃতজ্ঞতার সঙ্গে জানাই, সমস্ত ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি”।
টেস্ট ক্রিকেটের তিন নম্বর স্থানে ভরসাযোগ্য ব্যাটারের এমন আকস্মিক বিদায় ঘোষণার সিদ্ধান্ত দুঃখ দিয়েছে দেশ-বিদেশের অগুনতি ক্রিকেটপ্রেমীকে। রাহুল দ্রাবিড়ের যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবেই তাঁকে অভিহিত করতেন ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা। ফলে পুজারার অবসর ঘিরে সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁদের দুঃখপ্রকাশের পাশাপাশি নানান প্রতিক্রিয়ার বন্যা বইছে। পুজারা ভক্তদের সেই তালিকায় রয়েছেন শশী থারুরও। তিনিও তাঁর এক্স হ্যান্ডেলে দীর্ঘ পোস্ট করেছেন এই নিয়ে।
থারুর লিখেছেন, জাতীয় ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণের সিদ্ধান্ত পুজারা জানিয়ে দেওয়ায়, বিদায়ী ম্যাচ খেলার আর কোনও সম্ভাবনা রইল না। এমন অসম্মান কিন্তু তাঁর মোটেই প্রাপ্য ছিল না। বরং বোর্ডের পক্ষ থেকে, তাঁকে মর্যাদার বিদায় দেওয়া উচিত ছিল। ভারতীয় ক্রিকেট থেকে পুজারার অসম্মানজনক বিদায়ে তাই দুঃখ প্রকাশ করেছেন কংগ্রেস নেতা শশী।
৩৭ বছর বয়সী পুজারার জাতীয় ক্রিকেট দলে অভিষেক সেই ২০১০ সালে। ভারতের হয়ে ১০৩টি টেস্ট এবং ৫টি ওডিআই খেলেছেন। টেস্টে করেছেন ৭,১৯৫টি রান। যার মধ্যে রয়েছে ১৯টি সেঞ্চুরি এবং ৩৫টি হাফ সেঞ্চুরি। টেস্ট গড় ৪৩.৬০। ঘরের মাঠে তাঁর টেস্ট রান ৩৮৩৯, গড় ৫২.৫৮। তিনি ২৭৮টি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে খেলে ৫১.৮২ গড়ে ২১৩০১ রান করেছেন। যেখানে রয়েছে ৬৬ টি সেঞ্চুরি এবং ৩ টি ট্রিপল সেঞ্চুরি।
এক দশকেরও বেশি সময় ধরে, তিনি ভারতের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ৩ নম্বর ব্যাটসম্যান ছিলেন, দেশে এবং বিদেশে দলের কিছু গুরুত্বপূর্ণ টেস্ট জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তিনি শেষবার টেস্ট খেলেছেন ২০২৩ সালের জুনে। ওভালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল।
চেতশ্বর পুজারার হয়ে কলম ধরে কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর লিখেছেন, “জাতীয় দল থেকে ধারাবাহিকভাবে বাদ পড়ার জেরে এটি (অবসর ঘোষণা) অনিবার্য হয়ে পড়ে। এমনকী যদি তাঁর নতুন করে প্রমাণ করার মতো কিছুই অবশিষ্ট ছিল না। তবুও তাঁর অসাধারণ টেস্ট কেরিয়ারের একটা যোগ্য মর্যাদাপূর্ণ বিদায় কিন্তু প্রাপ্য ছিল”।
থারুর আরও লিখেছেন,“যখন তাঁকে বাদ দেওয়া হয়, তখন তিনি ঘরোয়া ক্রিকেটে ফিরে আসেন এবং বেশ কয়েকটি চিত্তাকর্ষক ইনিংস খেলেছেন। কিন্তু বোর্ডের নির্বাচকরা এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং তাঁর উপরই কোপ পড়েছে, অথচ পুজারার কিন্তু কোনও দোষ ছিল না।”
২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ভারত-অস্ট্রেলিয়ার ৫ ম্যাচের সিরিজে কিংবদন্তি ভারতীয় স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিন যখন টেস্ট অবসর ঘোষণা করেন, তখনও বিদায়ের প্রশ্নটি আলোচনার বিষয় ছিল। অথচ বোর্ডের তরফ থেকে সেভাবে তিনি কোনও সম্মান পাননি। অশ্বিনও বিসিসিআই-এর তরফ থেকে বিশেয বিদায় প্রত্যাশা করেননি।
কিংবদন্তি স্পিনার তখন বলেছিলেন, “আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি যে বিদায়ী ম্যাচের মধ্যে কোনও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নেই। আমি কেবল সৎ হতে চাই। একটু ভেবে দেখুন, যদি আমি বিদায়ী টেস্ট পাই, কিন্তু দলে জায়গা পাওয়ার যোগ্য না হই, তাহলে আমি নিশ্চয়ই খুশি হব না”।
চেতেশ্বর পুজারার অবসর গ্রহণের পরপরই ভারতীয় ক্রিকেটের তারকাজুটি রোহিত শর্মা এবং বিরাট কোহলির ভবিষ্যত নিয়েও নানান জল্পনা ভেসে বেড়াচ্ছে। তবে এই জুটি কিন্তু এখনও দেশের হয়ে ওয়ানডে ক্রিকেট ম্যাচ খেলার জন্য জোরকদমে প্রস্তুতি শুরু করেছেন।