আফগানিস্তানে ভূমিকম্প! সেদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় কুনার প্রদেশে রবিবার গভীর রাতে আঘাত হানে ৬.০ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্প। সরকারি হিসাবে এখন পর্যন্ত ২৫০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। অন্তত ৫০০ জন জখম হয়েছেন। মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আফগানিস্তানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুধু একটি গ্রামেই ৩০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। বহু আহতকে নিকটস্থ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। প্রদেশের তথ্য দপ্তরের প্রধান নাজিবুল্লাহ হানিফ জানান, দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থা দুর্বল হওয়ায় হতাহতের সঠিক সংখ্যা পেতে সময় লাগছে।
জানা গিয়েছে ,ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল মাত্র ১০ কিলোমিটার গভীরে। ফলে কুনার প্রদেশের বহু মাটি ও পাথরের ঘর ভেঙে গিয়েছে। আফগানিস্তান-পাকিস্তান সীমান্তবর্তী এলাকায় সর্বাধিক ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। প্রথম ৬.০ মাত্রার ভূমিকম্পের পর প্রায় ২০ মিনিটের মাথায় আবারও ৪.৭ মাত্রার কম্পন অনুভূত হয়। এরপর রাতভর আরও কয়েক দফা আফটারশক রেকর্ড করে ভারতের ন্যাশনাল সেন্টার ফর সিসমোলজি (এনসিএস)। রাত ১টা ০৮ মিনিটে, ১৪০ কিমি গভীরে ৪.৭ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। রাত ১টা ৫৯ মিনিটে, ১৪০ কিমি গভীরে ৪.৩ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। রাত ৩টা ০৩ মিনিটে, ৪০ কিমি গভীরে ৫.০ মাত্রার ভূমিকম্প হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অগভীর ও মাঝারি গভীরতার ভূমিকম্পগুলো সাধারণত বেশি ক্ষতিকর হয়, কারণ সিসমিক তরঙ্গ দ্রুত ও প্রবল আঘাত হানে মাটির উপরে।
আফগানিস্তানের পাশাপাশি পাকিস্তান, তাজিকিস্তান ও ভারতের উত্তরাঞ্চলেও প্রবল ভূমিকম্প অনুভূত হয়। ভারতের দিল্লি, নয়ডা, গাজিয়াবাদসহ এনসিআর অঞ্চলের বহু মানুষ রাত ১২টা ৫৫ মিনিটে হঠাৎ কম্পন টের পেয়ে আতঙ্কে ঘর ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে আসেন। তবে ভারতে কোনও ক্ষয়ক্ষতির খবর মেলেনি। এছাড়া একই রাতে ভারতের নাগাল্যান্ডে ২.৯ মাত্রার হালকা কম্পন এবং মধ্যপ্রদেশের সিংরাউলিতে ৩.৪ মাত্রার ভূমিকম্প রেকর্ড হয়। এগুলো তেমনভাবে টের পাওয়া যায়নি।
আফগানিস্তান ভৌগোলিকভাবে অত্যন্ত ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা। দেশটির মধ্য দিয়ে গিয়েছে ভারতীয় ও ইউরেশীয় টেকটোনিক প্লেটের মিলনরেখা। হিন্দুকুশ পর্বতমালা অঞ্চল প্রায়ই বড় ধরনের ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে। গত বছর পশ্চিম আফগানিস্তানে ধারাবাহিক কয়েকটি ভূমিকম্পে এক হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।
রাতের কম্পনে কাবুল থেকে দিল্লি পর্যন্ত মানুষ আতঙ্কে রাস্তায় বেরিয়ে আসে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই হঠাৎ কেঁপে ওঠা, দেওয়াল কাঁপা ও আতঙ্কের মুহূর্তের কথা শেয়ার করেছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আফগানিস্তানের উদ্ধারকারী দলগুলো ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামগুলোতে কাজ করছে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোও সহায়তার হাত বাড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আফগানিস্তানসহ গোটা দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে ভূমিকম্পের ঝুঁকি খুবই বেশি এবং যে কোনও সময় বড় বিপর্যয় ঘটতে পারে।
Afghanistan, Earthquake 2025, 6.0 Magnitude Earthquake, Death,
Kabul Earthquake
Pakistan India Tremors