চিনে যখন দিল্লি, বেজিং ও মস্কোর নতুন সম্পর্কের নতুন রোড ম্যাপ তৈরি হচ্ছে ঠিক তখনই ফের শুল্ক বার্তা দিয়ে বসলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সোমবার তিনি দাবি করেছেন, ভারত, মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক কমিয়ে শূন্যে নামাতে সম্মত হয়েছে। তবে তাঁর অভিযোগ, “এটি বহু বছর আগেই করা উচিত ছিল, এখন আর সময় বেশি নেই।”
বছরের শুরুতেই হোয়াইট হাউসে দ্বিতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় ফিরে গোটা বিশ্ব বাণিজ্যকে নিজের কব্জায় আনতে শুল্ককে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন ট্রাম্প। তাঁর প্রশাসন ইতিমধ্যেই ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক এবং রাশিয়ার তেল আমদানির কারণে অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। ফলে ভারতের ওপর মোট শুল্ক দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশে, যা বিশ্বের সর্বোচ্চগুলির মধ্যে একটি।
অথচ দিল্লির অভিযোগ ট্রাম্প ভারতের উপর রাশিয়া থেকে তেল কেনার জন্য শুল্ক চাপালেও রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও কঠোর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা থেকে বিরত থেকেছেন।
অন্যদিকে, বিদেশমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর যুক্তি দিয়েছেন, একই মানদণ্ড চিন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়নি, অথচ তারাই রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল ও এলএনজি-র সবচেয়ে বড় ক্রেতা। ট্রাম্পের এই দ্বিমুখী নীতির পিছনে আসলে রাজনীতি কাজ করছে বলে অভিযোগ উঠে এসেছে।
ট্রাম্পের এই আকাশছোঁয়া শুল্কের সিদ্ধান্তে দুই দেশের বন্ধুত্বের সম্পর্কে টানাপোড়েনে তৈরি হয়েছে। দিল্লি আগে থেকেই এই শুল্ককে ‘অন্যায্য, অযৌক্তিক ও অসহনীয়’ বলে আখ্যা দিয়েছে। কৃষি ও দুগ্ধজাত বাজারে প্রবেশাধিকার নিয়েই মূলত দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য আলোচনায় জট তৈরি হয়েছে। ট্রাম্প কৌশলে মার্কিন পণ্যের জন্য ভারতের বাজার খুলতে চান, আর প্রধানমন্ত্রী মোদি দৃঢ়ভাবে কৃষকদের স্বার্থ রক্ষায় অটল।
এমন পরিস্থিতিতেই ভারতের কৌশলগত রাস্তা যখন চিন ও রাশিয়ামুখী তখন ফের না মচকানোর বার্তা দিলেন ট্রাম্প।
সোমবার ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যালে পোস্ট করে লিখেছেন, “তারা ( পড়ুন ভারত) এখন শুল্ক শূন্যে নামাতে রাজি হয়েছে, কিন্তু সময় ফুরোচ্ছে। বহু বছর আগেই এটি করা উচিত ছিল। ভারত-মার্কিন সম্পর্ক এতদিন ধরে সম্পূর্ণ একপেশে বিপর্যয় ছিল।”
ট্রাম্পের অভিযোগ, “খুব কম মানুষ বোঝে যে আমরা ভারতের সঙ্গে খুব সামান্য ব্যবসা করি, অথচ তারা আমাদের সঙ্গে বিপুল ব্যবসা করে। তারা আমাদের কাছে বিপুল পণ্য বিক্রি করে, অথচ আমরা তাদের কাছে প্রায় কিছুই বিক্রি করতে পারি না। কারণ ভারত এতদিন আমাদের ওপর অত্যন্ত উচ্চ শুল্ক চাপিয়ে রেখেছে, যা বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ।”
তবে শুল্ক শূন্যে নামানোর বিষয়ে ভারতের পক্ষ থেকে কোনও নতুন তথ্য প্রকাশ করা হয় নি। আগেই জানানো হয়েছে, যেকোনও বৃহৎ অর্থনীতির মতোই দিল্লি তার জাতীয় স্বার্থ ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেবে।
বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েলও বলেছেন, ভারত কোনওভাবেই ‘ঝুঁকে পড়বে না’, বরং নতুন বাজার দখলের দিকে মনোযোগ দেবে।