উত্পল পট্টনায়ক
ভাদ্র মাসও প্রায় শেষ হতে চলল, অথচ ইলিশের দিকে এখনও হাত বাড়াতে ভরসা পাচ্ছেন না মধ্যবিত্ত বাঙালি। এর উপর দোরগোড়ায় বিশ্বকর্মা পুজো। আর সেই পুজোর আগের রাতে, এখনও অনেক বাঙালির ঘরে হয় রান্না পুজো বা অরন্ধন উৎসব। যেখানে ইলিশের কিছু পদ মাস্ট। স্বভাবতই ইলিশের খোঁজে আমবাঙালি এখন বেশি করে ঢুঁ মারছে আশপাশের খুচরো কিংবা পাইকারি মাছ বাজারে।
সংবাদ মাধ্যমে কদিন আগেও ছবি সহ ফলাও করে খবর হয়েছে টন টন ইলিশ ধরা পড়ার। হা-পিত্যেশ করা বসে থাকা মাছে ভাতে বাঙালি দৌড়েছিল কাছে পিঠের বাজারে। তবে তাঁদের দেখা ও পড়া সেই খবরের সঙ্গে, বাজারের কোনও মিল খুঁজে পাননি। ১ কেজি ওজনের কিছু বেশি ইলিশ বিক্রি হয়েছে ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকায়। ৫০০ গ্রামের ওপরে ইলিশের দাম ছিল ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা আর ছোট ইলিশের দাম ঘোরাফেরা করেছে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে।
সাহস করে কিছু ক্রেতা প্রশ্ন ছুড়েছিলেন পরিচিত মাচ বিক্রেতাদের উদ্দেশে। বিক্রেতাদের উত্তর ছিল, সব হিমঘরে ঢুকছে। পুজোর সময় বেরবে। তখন আরও চড়া দামে কিনতে হবে। বঙ্গোপসাগরে ধরা পড়া ৩০০ টনেরও বেশি ইলিশের এমন আচমকা বাজার থেকে নিরুদ্দেশ হওয়াটা ঠিক মেনে নিতে পারেননি আড্ডাবাজ বাঙালি।
তাই চায়ের ঠেকে কি পাড়ার মোড়ে কিংবা ক্লাব ঘরে তাস আর ক্যারাম পেটাতে পেটাতে কদিন গালমন্দ করেছে গলার শিরা ফুলিয়ে। প্রশ্ন তুলেছে, উচ্চ মুনাফা লাভের আশায় আম বাঙালিকে ইলিশ থেকে কেন বঞ্চিত করা হচ্ছে। তাঁদের সেই গালমন্দ কিংবা প্রশ্নে কিছুই হচ্ছে না দেখে শেষমেশ থম মেরে গড্ডালিকা প্রবাহে ফের গা ভাসিয়েছে।
তবে পুজোর হাওয়া গায়ে ঝাপটা দিতেই ফের খোঁজ শুরু হয়েছে ইলিশের। সুন্দরবন মেরিন ফিশারমেনস ইউনিয়নের সম্পাদক সতীনাথ পাত্রের বক্তব্য, স্থানীয় সাধারণ মানুষ ছোট ইলিশকেই বেশি পছন্দ করেছেন, কারণ এর দাম তাঁদের নাগালের মধ্যে। পুজোর মুখে ওড়িশা, গুজরাত কিংবা মায়ানমারের ইলিশ ঢুকলে দাম আরও কিছুটা কমবে।
হাসিনা সরকারের পতন ও বাংলাদেশের অস্থির পরিস্থিতির কারণে পদ্মার ইলিশ গতবছর সেভাবে আসেনি। এবছরও কেমন আমদানি হবে তা জানেন না মাছ ব্যবসায়ীরা। তবে পদ্মার ইলিশ এলে সাইজ পিছু তার দাম কেজিতে ১৮০০ থেকে ২৫০০ টাকা করে উঠবে বলে আগাম জানিয়েছেন পাইকারি বাজারের ইলিশ ব্যবসায়ীরা।
পাইকারি বাজারে ইলিশ ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরা বলেছেন, বর্তমানে ১ কেজি বা তার বেশি ওজনের তাজা স্থানীয় ইলিশের দাম ঘোরাফেরা করছে ১,৮০০-২,২০০ টাকার মধ্যে। দুর্গাপুজোর সময় আরও বাড়তে পারে দাম। অন্যদিকে, মায়ানমারের ইলিশ প্রতি কেজি ১,৫০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে এবং দুর্গাপুজোর সময় তার দাম প্রতি কেজি ১,৭০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। বর্তমানে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায় এমন আরেকটি জাতের মধ্যে রয়েছে ৫০০ গ্রাম বা তার কম ওজনের স্থানীয় ইলিশ এবং এর দাম প্রতি কেজি প্রায় ৫৫০-৬০০ টাকা।
ছোট ইলিশের চাহিদা বাড়ে বিশ্বকর্মা পুজো বা ‘রান্না পুজো’র সময়। বেশ কয়েক বছর ধরেই এমন ট্রেন্ড বজায় রয়েছে মাছ বাজারে। আর দুর্গাপুজোর সময় বাড়ে বড় ইলিশের চাহিদা। বাজারের প্রবণতা দেখেই তাই ধরা পড়া বেশির ভাগ ঢুকে যাচ্ছে হিমঘরে। খোলা বাজারের যতটুকু আসছে তার দাম স্বভাবতই বেশ চড়া। উৎসবের আর পাঁচটা খরচ মেটাতে গিয়ে ইলিশের দিকে তাই হাত ছোঁয়াতে পারছে না আমবাঙালি।