আমাদের দেশে প্যারাসিটামল ওভার দ্য কাউন্টার মেডিসিন ।মানে কোনও প্রেসক্রিপশন ছাড়াই এই ওষুধটি দোকান থেকে কিনে নেওয়া যায় এবং আমাদের মধ্যে একটি ধারণা সাধারণভাবে প্রচলিত আছে প্যারাসিটামল অত্যন্ত নিরাপদ ওষুধ তাই যত চাও তত খাও । একটু ব্যথা হলেই বা জ্বর জ্বর ভাব হলেই আমরা মুঠো মুঠো প্যারাসিটামল খেয়ে নিই। কিন্তু জানেন কি দীর্ঘদিন ধরে এই প্যারাসিটামল খাওয়ার বেশ কিছু অপকারিতা আছে। বিষয়টি জানতে সংবাদ মাধ্যমের তরফে যোগাযোগ করা হয়েছিল মুম্বইয়ের কোকিলাবেন ধীরুভাই আম্বানি হসপিটালের চিকিৎসক ডাক্তার কপিল আডবাণীর সঙ্গে। তিনি জানান, মুড়ি মুড়কির মতো প্যারাসিটামল খেলে লিভারের ক্ষতি হতে পারে , চাপ পড়তে পারে কিডনির ওপর। এমনকী জ্বরের সময় যদি খালি পেটে প্যারাসিটামল খাওয়া যায় সেটাও সকলের জন্য নিরাপদ নয়।
খেলে কী হয়?
ডক্টর আডবাণী এক্ষেত্রে জানান জ্বরের সময় যদি অল্প খাবার খেয়ে বা প্রায় খালি পেটে প্যারাসিটামল খাওয়া যায় এবং তা স্বল্প ডোজে তাহলে খুব একটা ক্ষতি কিছু হয় না। এমনকী মার্কিন গবেষকদের গবেষণাও এই তথ্যকে সমর্থন করেছে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেছে পেটের আস্তরণের ওপর তার কিছু ক্ষতিকর প্রভাব পড়েছে আর কয়েকটা বিশেষ কারণ বাদ দিয়ে প্যারাসিটামল লিভারের ক্ষেত্রেও খুব একটা ক্ষতি করে না। তার চেয়ে বরং অতিরিক্ত ব্যথা যন্ত্রণা কমাতে সাহায্য করে। এদিক থেকে বিচার করলে প্যারাসিটামল মোটামুটি নিরাপদ তবে নন স্টেরয়ডাল আন্টি ইনফ্লামেটরি অন্যান্য ড্রাগ যেমন আইবোপ্রোফেন ব্যবহারে সমস্যা বাড়তে পারে যদি তা খালি পেটে খাওয়া হয় । তবে চিকিৎসকরা বলছেন যে সব ব্যক্তির একটু বেশি মাত্রায় গা বমি ভাব থাকে তাদের প্যারাসিটামল খাবারের সঙ্গে খাওয়া উচিত।
বিশ্বে যে সকল নিরাপদ ওষুধ আছে তার মধ্যে প্যারাসিটামল উপরের সারিতেই আছে । এটি চিকিৎসক নির্ধারিত মাত্রায় খেলে কোন ক্ষতি নেই প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে এর ডোজ হলো ৫০০ গ্রাম করে আটটি ট্যাবলেট সারাদিনে খাওয়া যায় কিন্তু অনেকেই আছেন এই ডোজ সপ্তাহে কয়েকবার ধরে খান। এভাবে নিজেদের মতে প্যারাসিটামল খেলে লিভারের নানারকম সমস্যা হতে পারে। লিভারের উৎসেচকের ক্ষরণ অস্বাভাবিক হারে হতে থাকে , লিভারের ওপর চাপ পড়ে বিশেষ করে যারা মদ্যপান করেন অথবা আগে থেকে লিভারের সমস্যা আছে
তাঁদের ক্ষেত্রে লিভারের সমস্যা আরও হওয়ার বা তা বেড়ে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে।
২০২২ সালের একটি গবেষণাকে তুলে ধরে ডক্টর আদবানী বলেন যে সকল ব্যক্তি প্রতিদিন চার মিলিগ্রাম করে প্যারাসিটামল খান তাদের রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে বিশেষ করে যারা আগে থেকেই হাইপার টেনশনের রোগী তাঁদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা অনেক বেশি থাকে।
যদিও দুনিয়ার জুড়ে প্যারাসিটামলকে নিরাপদ ওষুধের তকমা দেওয়া হয়েছে তবুও কয়েকটি ক্ষেত্রে এটি সাবধানে খাওয়া উচিত —
প্রথমত যাদের লিভারের সমস্যা রয়েছে বা অতিরিক্ত অ্যালকোহল খান তাঁরা বুঝে শুনে প্যারাসিটামল খাবেন চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত নিজের মতে কখনোই নয়
দ্বিতীয়ত যেসব ব্যক্তির ওজন স্বাভাবিকের তুলনায় অনেকটাই কম তাদের প্যারাসিটামল খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
তৃতীয়ত কিডনি রোগীদের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে ।
চতুর্থত গর্ভবতী মহিলাদের কখনোই নিজের মতে প্যারাসিটামল খাওয়া উচিত না কেননা এটি অনেক ক্ষেত্রে গর্ভস্থ সন্তানের হার্টের সমস্যা ডেকে আনে। তাই একান্ত খেতে হলে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে আলোচনা করে খান। কয়েকটি সমীক্ষা থেকে প্রমাণ হয়েছে গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত পরিমাণ প্যারাসিটামল খেলে গর্ভস্থ ভ্রূণের স্নায়ুগত সমস্যা হতে পারে যা থেকে পরবর্তীকালে অটিজম বা অ্যাটেনশন ডেফিসেট হাইপার অ্যাকটিভিটি ডিসঅর্ডারের মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে ।
সবশেষে বলব যেসকল রোগী রক্ত তরল করার ওষুধ খান যেমন ওয়ারফেরিন তাদের দীর্ঘদিন উচ্চ মাত্রায় প্যারাসিটামল খাওয়ার আগে চিকিৎসকের সঙ্গে ভালো করে আলোচনা করে নেওয়া উচিত।
প্যারাসিটামলের ডোজ কতটা খাবেন সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরী।