বছর ঘুরলেই পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোট। অথচ মোদি-রাজনাথের সদ্য শেষ হওয়া কলকাতা সফরে একটা শব্দও প্রকাশ্যে উঠে আসেনি এই নিয়ে। হুঙ্কার তো দূরের কথা, রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসকে বিঁধে কোনও কটাক্ষও করা হয়নি বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের তরফ থেকে। রাজনীতির ময়দানে অবাক করা এমন ঘটনার নেপথ্যে নেপালের সাম্প্রতিক অশান্তি।
হিমালয়ের দেশটিকে ঘিরে বাংলা সীমান্তে কোনও রকম উত্তেজনা যাতে না তৈরি হয় সেদিকে সজাগ দৃষ্টি কেন্দ্র এবং রাজ্য দুই প্রশাসনেরই। দেশের নিরাপত্তার স্বার্থেই, রাজনীতির কূটকচালি থেকে আপাতত দূরে রয়েছে কেন্দ্র ও রাজ্যের শাসক দল।
নেপালের অস্থিরতা কাটতে না কাটতেই রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস নেপাল সীমান্ত পরিদর্শন করেছেন। শুরুতে এই নিয়ে বিতর্কের আবহ তৈরি হয়েছিল। রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান তার সাংবিধানিক প্রধানকে সফর বাতিল করার অনুরোধ করেছিলেন।
কিন্তু সেটি না হওয়ায় মুখ্যমন্ত্রীই পরে রাজ্যপালের সফর নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে পুলিশের সহায়তায় সমস্ত ব্যবস্থা করেছেন। যার জন্য ফাঁসিদেওয়া এলাকায় গিয়ে সীমান্তের বেড়া ও সেনাদের নজরদারি প্রত্যক্ষ করেছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। নিরাপত্তা বাহিনীর জওয়ানদের সঙ্গে কথাও বলেছেন তিনি।
পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে নেপালের প্রায় ১০০ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। রয়েছে শিলিগুড়ি সংলগ্ন ঝুঁকিপূর্ণ চিকেন নেকও। নেপালের জেন জেডের বিক্ষোভ কিন্তু চিকেন নেকে কোনও অস্থিরতা তৈরি করতে পারেনি। আর এটি সম্ভব হয়েছে দেশের সীমন্তরক্ষী বাহিনীর অতিরিক্ত সতর্কতা এবং কেন্দ্র ও রাজ্য গোয়েন্দা বাহিনীর নিয়মিত তথ্য আদান-প্রদানের জেরেই।
দেশের নিরাপত্তাকে বাড়তি গুরুত্ব দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উত্তরবঙ্গ সফরে থাকাকালীন বলেছেন, “এগুলি জাতীয় স্বার্থের বিষয় এবং এই বিষয়গুলিতে তৃণমূল-বিজেপির মধ্যে কোনও বিরোধ নেই। আমাদের জাতীয় স্বার্থের বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত। আমরা নিরাপত্তার বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ”।
নেপালের জেন জেডের বিক্ষোভের কারণে শুরু হওয়া রাজনৈতিক অস্থিরতা এখন অনেকটাই স্থিমিত। সুশীলা কার্কির নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় এসেছে। তবে ভারত তার সীমান্ত সতর্কতা এতটুকু শিথিল করেনি। বরং গত সপ্তাহে নেপালে সমস্যা শুরু হওয়ার সময় থেকে আরও বাড়ানো হয়েছে সীমান্তে নজরদারি।
কলকাতায় ভারতীয় সেনার পূর্বাঞ্চলীয় সদর দফতর ফোর্ট উইলিয়ামে সেনা কমান্ডারদের একটি সম্মিলিত বৈঠকে হাজির ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। ছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালও। বৈঠকে নেপাল-ভারত সীমান্ত ঘিরে অনেকটা সময় বৈঠক হয়েছে।
বৈঠকে নেপাল সীমান্তে আরও সেনা মোতায়েন, পানিট্যাঙ্কি সেতু ঘিরে এসএসবি ও রাজ্য পুলিসের যৌথ নজরদারির দিকে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদানও বাড়তি গুরুত্ব পেয়েছে। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, কাঠমাণ্ডুর বাজারে চিনা মুদ্রার উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি উদ্বেগ বাড়িয়েছে। যার জেরে গোয়েন্দা দফতরের কর্তারা সতর্ক নজরদারি চালাচ্ছেন।
