সমীর ঘোষ
উৎসবের আবহে গোটা রাজ্য যখন আলো ঝলমল, ঠিক তখনই তৃণমূল কংগ্রেসের নেতৃত্বে থাকা পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে এক অন্ধকারময় রিপোর্ট তুলে ধরল আরএসএসের মুখপত্র অর্গানাইজার। “ডি-ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশন অ্যান্ড পভার্টিফিকেশন অব ওয়েস্ট বেঙ্গল: নক্সালিজম অ্যাট ইটস পিক” শিরোনামে লেখা এক প্রবন্ধে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে রাজ্যের পিছিয়ে পড়ার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, রাজ্য গুরুতর অর্থনৈতিক ও সামাজিক পতনের মধ্য দিয়ে চলেছে। প্রবন্ধে বলা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ সরকার ২০২৫ সালে পাশ করা ‘রিভোকেশন অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল ইনসেনটিভ স্কিমস অ্যান্ড অবলিগেশনস ইন দ্য নেচার অফ গ্রান্টস অ্যান্ড ইনসেনটিভস বিল, ২০২৫’-এর মাধ্যমে রাজ্যের শিল্পগুলোকে দেওয়া সমস্ত প্রকার ইনসেনটিভস সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়েছে। অভিযোগ, ১৯৯৩ সাল থেকে অতীতের সময়ে দেওয়া সমস্ত ইনসেনটিভসও প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। আর এটাই প্রমাণ করে যে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রকৃত উদ্দেশ্য শুধু শিল্পকে নিরুৎসাহিত করাই নয়, পাশাপাশি তাকে লোকসানের দিকেও ঠেলে দেওয়া।
লেখা হয়েছে, বিশ্বকর্মা পুজোর ঠিক আগের দিন আল্ট্রাটেক সিমেন্ট, ইলেকট্রোস্টিল কাস্টিং লিমিটেড, গ্রাসিম ইন্ডাস্ট্রিজ, নিউভোকো ভিস্টাস এবং ডালমিয়া সিমেন্ট এর বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে। কারণ তাদের দাবি, রাজ্য সরকারের এই অদ্ভুত আইনের খসড়া কার্যত এই ধরনের ব্যবসা ও শিল্প সংস্থাগুলিকে রাজ্য ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করতে পারে।
বলা হচ্ছে এই আইন নাকি রাজ্যের রাজস্ব আদায় বাড়ানোর জন্য তৈরি হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে পশ্চিমবঙ্গ সরকার নিজেই রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য ইতিবাচক পদক্ষেপ করেনি বললেই চলে। প্রবন্ধে বলা হয়েছে, বিজেপি সাংসদ শমীক ভট্টাচার্যের এক প্রশ্নের উত্তরে সদ্য ভারতের কর্পোরেট বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ও সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক প্রতিমন্ত্রী রাজ্যসভায় জানান যে, ২০১৬ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে রাজ্য সরকারের নিজস্ব রিপোর্ট অনুযায়ী বড়, মাঝারি ও ছোট মোট ২১,৫২১টি শিল্প ইউনিট পরিবেশগত ছাড়পত্র না পাওয়ার কারণে বন্ধ হয়ে গেছে। এর মধ্যে বড় শিল্প ইউনিটের সংখ্যা ছিল ২৭১।
আর এভাবেই বিনিয়োগের পরিবেশ না থাকা, রাজনৈতিক হিংসা, সিন্ডিকেটরাজ ইত্যাদির জেরে পুঁজি ও শিল্প পালাচ্ছে রাজ্য থেকে। পাশাপাশি স্কুল সার্ভিস কমিশনে নিয়োগ কেলেঙ্কারি, গরু পাচারের কেলেঙ্কারির মতো বড় কেলেঙ্কারির অভিযোগ করে প্রশাসনকে দুর্নীতিগ্রস্ত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, দুর্নীতি ও শাসনব্যবস্থার ব্যর্থতার সঙ্গে গোটাটা মিশে গিয়ে তা জনগণকে দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
এর পাশাপাশি বলা হয়েছে, রাজ্যে সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষয়ের জেরে মাথাচাড়া দিচ্ছে নকশালবাদ। এমন অত্যন্ত বিতর্কিত দাবির পাশাপাশি এমন চরম বামপন্থী উগ্রবাদের জন্য উর্বর জমি নিয়ন্ত্রণ করতে রাজ্য সরকার ব্যর্থ হচ্ছে বলেও অভিযোগ করা হয়েছে অর্গানাইজার-এর এই প্রবন্ধে।
