কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে এত বৃষ্টি শেষ কবে দেখেছে কলকাতা তা নিয়ে পুজার মুখে চর্চা পুরোদমে। পুজোর প্রস্তুতি কার্যত লাটে ওঠার উপক্রম। শহর কলকাতায় কোথায় নজরকাড়া প্যান্ডেল হল তা নিয়েই চর্চা থাকে এই সময়। তবে রাতভর মুষলধারে বৃষ্টি ওলটপালট করে দিল সবকিছু। মাটি হতে বসেছে পুজোর আনন্দ।
জানা গিয়েছে, ৫০ বছরে রেকর্ড বৃষ্টি কলকাতায়। অন্তত সাত জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। পুজোর আগেই বিসর্জনের সুর।
কলকাতায় কোথায় কত বৃষ্টি হল?
পাঁচ ঘন্টার ব্যবধানে রেকর্ড বৃষ্টি কলকাতায়।
ভোর ৫টা পর্যন্ত বৃষ্টির হিসেব-
কামডহরি(গড়িয়া)- ৩৩২ মি.মি
যোধপুর পার্ক- ২৮৫ মিলিমিটার
কালিঘাট- ২৮০.২ মিলিমিটার
তপসিয়া- ২৭৫ লিমিমিটার
বালিগঞ্জ- ২৬৪ মিলিমিটার
চেতলা- ২৬২ মিলিমিটার
মোমিনপুর- ২৩৪ মিলিমিটার
চিংড়িহাটা- ২৩৭ মিলিমিটার
ধাপা- ২১২ মিলিমিটার
সিপিটি ক্যানেল- ২০৯.৪ মি.মি
উল্টোডাঙ্গা- ২০৭ মিলিমিটার
কুদঘাট- ২০৩.৪ মিলিমিটার
পাগলাডাঙ্গা (ট্যাংরা)- ২০১ মি.মি
কুলিয়া (ট্যাংরা)- ১৯৬মি.মি
ঠনঠনিয়া- ১৯৫ মিলিমিটার
প্রবল বৃষ্টি, একের পর এক বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার ঘটনা। একের পর এক মৃত্যুর খবর মিলেছে।
কলকাতায় প্রাথমিকভাবে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর । মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। অন্তত সাতজনের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর। বেনিয়াপুকুর, বালিগঞ্জ প্লেস, কালিকাপুর আর নেতাজি নগর, মোমিনপুর বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে। নেতাজিনগর মোড়ে জমা জলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ষাটোর্ধ ফল বিক্রেতার মর্মান্তিক মৃত্যু।
পুজোর মুখে জলে ভাসছে মৃতদেহ। এই ছবিও দেখতে হল কলকাতাকে।
সিইএসসিকে কিছু জায়গায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে বলা হয়েছে।
রাতারাতি কলকাতার একাধিক রাস্তা হয়ে গেল নদী। একাধিক জায়গায় জল বের করার সমস্ত চেষ্টা কার্যত ব্যর্থ।
মধ্যরাত থেকে অঝোরে বৃষ্টি। রাত ১টা থেকে ভোর পাঁচটা পর্যন্ত গড়িয়া ( কামডহরি পাম্পিং স্টেশন) এলাকায় সর্বোচ্চ বৃষ্টির রেকর্ড হয়েছে, চার ঘন্টায় ৩৩২মিমি বৃষ্টি। এর বাইরেও গোটা শহরে মাঝ রাত থেকে ভোর পর্যন্ত প্রায় সর্বত্র ২০০ মিমির বেশি বৃষ্টি রেকর্ড হয়েছে। যার যারে শহরের বিভিন্ন জায়গায় জল জমে গিয়েছে।
২৩ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার,
১.৫১ মিনিটে গঙ্গার জলস্তর ছিল ৫.৬৬ মিটার (১৮.৫৭ ফুট) ।
গঙ্গার ধারের লকগেট গুলি রাত ১২ টা থেকে ভোর ৪ টে পর্যন্ত বন্ধ ছিল। যার জেরে জল নামেনি।
দুর্গাপুজোর আগে মাথায় হাত পুজো কমিটিগুলির। মধ্যরাতে ৫ ঘন্টা টানা বৃষ্টি শহরের বিভিন্ন এলাকায়। পুজোর আগে এই দুর্যোগ চিন্তায় ফেলে দিয়েছে বাঙালিকে।
ইতিমধ্যেই বালিগঞ্জ, পার্ক সার্কাস সহ দক্ষিণ কলকাতার বেশ কিছু জায়গা জলমগ্ন। এছাড়া উত্তরের দমদমসহ বেশ কয়েকটি জায়গা ডুবে গিয়েছে। দমদমে একাধিক স্কুলকে বন্ধ করে দেওয়া হয়।
জলে ডুবে আছে ১০১ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকা। রবীন্দ্রপল্লী সার্বজনীন দুর্গাপূজোর প্যান্ডেলের কাজে বিঘ্ন।বাইকগুলো জলের মধ্যে প্রায় ডুবে আছে। দক্ষিণ কলকাতার বাঘাযতীন এলাকায় ভয়াবহ অবস্থা। যাদবপুর,কেষ্টপুর, কসবা সহ বিভিন্ন জায়গায় ভয়াবহ পরিস্থিতি। ন্যাশনাল মেডিক্যাল , আরজিকরে জলের তলায় জরুরি বিভাগ সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ।
রাতভর রেকর্ড বৃষ্টিতে ব্যহত রেল পরিষেবা। ট্রেন চলাচলে বিঘ্ন, হাওড়া বর্ধমান, শিয়ালদা মেইন শাখায়।যার জেরে দুর্ভোগে পড়েছেন নিত্যযাত্রীরা। একাধিক দূরপাল্লার ট্রেন বাতিল করা হচ্ছে। মেট্রো ব্লু লাইনে সকাল থেকেই পরিষেবায় বিঘ্ন। মহানায়ক উত্তম কুমার থেকে রবীন্দ্র সরোবর মেট্রো স্টেশন পর্যন্ত প্রবল বৃষ্টিতে তীব্র সমস্যা। চরম ভোগান্তি মেট্রো যাত্রীদের।
কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিম গিয়েছেন কন্ট্রোলরুমে। জল পুরোপুরি বের হতে মঙ্গলবার রাত গভীর হয়ে যেতে পারে বলে খবর। মেয়র বলেন, ‘এমন মেঘ ভাঙ্গা বৃষ্টি দএর আগে কোনদিন দেখিনি। রাস্তায় বেরোলে সতর্ক থাকুন। ব্যাক ফ্লো হয়ে চলে আসছে। কলকাতাবাসীকে অনুরোধ, আজকের দিনটা অন্তত বাড়ি থেকে বেরোবেন না। ‘