মঙ্গলবারের বৃষ্টিপাতকে অস্বাভাবিক এবং হঠাৎ উদ্ভূত হওয়া পরিস্থিতি বলে উল্লেখ করে আমফান, ভূমিকম্প বা করোনার সঙ্গে তুলনা করলেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। এদিন বিকেলে সাংবাদিক সম্মেলনে কলকাতার মেয়র বলেন, “ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকলেও ঠিক কতটা বৃষ্টি হবে আর তার জন্য কতটা জল জমবে তা আগাম বলা যায় না। আমার ৬০ বছরের জীবনে এমন বৃষ্টি দেখিনি। ক্লাউডবার্স্ট টাইপের বৃষ্টি হয়েছে। শুধু এখানে নয়, এটা এখন গোটা দেশে ও দুনিয়াতেও হচ্ছে। নতুন সমস্যা, তাই বিজ্ঞানী, আবহাওয়াবিদদের সঙ্গে পরামর্শ নিয়েই তাদের সিদ্ধান্ত মতো আগামী দিনে সমাধানের পথ খুঁজতে হবে।”
মেয়র জানান, সোমবার রাত ১২টা থেকে মঙ্গলবার ভোট ৪টে পর্যন্ত গঙ্গার লকগেট বন্ধ ছিল, তাই শহরের জল বেরোতে পারেনি। তার ওপর সকালে জোয়ার এসে যাওয়ায় নদীর জলস্তর বেড়ে গিয়েছিল। জল সরানোর জন্য ভাটার জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে। শহরের সবকটি পাম্পিং স্টেশন চলছে। একাধিক জায়গায় জল নেমে গেছে। তবে আমহার্স্ট স্ট্রিট, ঠনঠনিয়া কালীবাড়ি, এন্টালি, দমদম-পাতিপুকুর আন্ডারপাস, বিজন সেতু, গড়িয়াহাট সহ কিছু জায়গায় এখনও জল জমে রয়েছে।
সিপিএম নেতা তথা কলকাতার প্রাক্তন মেয়র বিকাশ ভট্টাচার্য পাইপলাইন, খাল সংস্কার, জলাভূমি ভরাট সহ একাধিক বিষয়ে পুরসভার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তার জবাবে ফিরহাদ বলেন, “বাড়িতে এসি ঘরে বসে প্রশ্ন তোলা যেতে পারে, কিন্তু দোষারোপ করে মানুষের সুরাহা হবে না। আমরা রাস্তায় আছি।”
তাঁর দাবি, “ড্রেনেজে কোনও সমস্যা নেই। পাইপ লাইনে যেখানে এক ঘণ্টায় ২০ মিমি জল সরানো যায় সেখানে ৩০০ মিমি জল এসেছে। অঙ্কের হিসেবে ১৭-১৮ ঘন্টা লাগার কথা থাকলেও ৫-৬ ঘন্টায় অনেক জায়গা থেকে জল সরে গেছে।”
জলাভূমি সবথেকে বেশি বাম আমলেই ভরাট হয়েছিল বলে বিকাশকে পাল্টা আক্রমণ করেন ফিরহাদ। তিনি বলেন, “খালগুলিও সংস্কার করা হয়েছে। কিন্তু গঙ্গা ভরে থাকলে খালের জল যাবে কোথায়?”
ইতিমধ্যেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে শহরে অন্ততপক্ষে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই বিষয়ে সিইএসসি-র বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে মেয়র বিষয়টি বিদ্যুৎ মন্ত্রকের ব্যাপার বলে জানান। তিনি বলেন, ঘরের মধ্যে জল ঢুকে ফ্রিজের সংস্পর্শে আসায় সেই জলেই শক খেয়েছেন এক ব্যক্তি। এমন ঘটনা সচরাচর হয় না।
পুজোর মুখে এই দুর্যোগে পুজোর বাজারের সঙ্গে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত পুজো প্যান্ডেলগুলিও। মেয়র বলেন, “দুর্ভাগ্য আমাদের। ব্যবসায়ীদের বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে, প্যান্ডেলগুলি জলে ডুবে আছে। দু-তিন দিনের মধ্যে অবস্থা স্বাভাবিক হবে বলে আশা করছি যদি আর বৃষ্টিপাত না হয়। উত্তরাখণ্ড, হিমাচলেও এই ধরনের বৃষ্টি হয়েছে যাতে তীর্থযাত্রীরা মারা গেছেন। আমরা তো ভগবান নই। প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করতে পারি না। পরিস্থিতি যেমন আসবে, সেই অনুযায়ী সামাল দেব।”