পাকিস্তানের সঙ্গে সিন্ধু জলবন্টন চুক্তি স্থগিত করার পর ভারত এবার সিন্ধু উপত্যকায় এক ব্যাপক প্রকল্প রূপায়ণের পরিকল্পনা নিয়েছে। প্রকল্পের লক্ষ্য একদিকে উত্তর ভারতের রাজ্যগুলির জলের চাহিদা পূরণ ও পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবে পাকিস্তানকে কঠিন বার্তা দেওয়া।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, ‘ইন্টার-বেসিন ইন্ডাস ওয়াটার ট্রান্সফার স্কিম’-এর অধীনে যে মহাপরিকল্পনা এগোচ্ছে, তাতে থাকবে—
•১৪ কিমি দীর্ঘ টানেল: সিন্ধু নদীকে বিপাশা নদীর সঙ্গে যুক্ত করবে।
•১১৩ কিমি ক্যানাল: সিন্ধুর জল উত্তর ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে পৌঁছে দেবে।
•উঝ মাল্টিপারপাস প্রজেক্টের সংযোগ : জম্মু-কাশ্মীরের কাঠুয়া জেলার উঝ নদী (রাভির উপনদী) থেকেও জল সরবরাহ হবে।
•রাভি-বিপাশা-শতদ্রু নদীকে সিন্ধু উপত্যকার সঙ্গে যুক্ত করা।
২০২৮ সালের মধ্যে কাজ সম্পূর্ণ করার সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই প্রকল্পের খরচ আনুমানিক ৪,০০০–৫,০০০ কোটি টাকা। প্রকল্প রূপায়ণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে লারসেন অ্যান্ড টুব্রোকে (এল&টি)। সংস্থাটি বর্তমানে প্রকল্পের বিস্তারিত পরিকল্পনা (ডিপিআর) প্রস্তুত করছে। আগামী বছরই রিপোর্ট জমা পড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। নির্মাণে ব্যবহার করা হবে টানেল বোরিং মেশিন ও রক শিল্ড প্রযুক্তি।
পরিকল্পনা রূপায়িত হলে পাকিস্তানে ভারতের ভাগের অতিরিক্ত জল আর প্রবাহিত হবে না। “রক্ত ও জল একসঙ্গে প্রবাহিত হতে পারে না”—পহেলগাম জঙ্গি হামলার পর দিল্লির এই বার্তাই প্রকল্পের রাজনৈতিক ভিত্তি।
এই প্রকল্পের ফলে উত্তর ভারতের রাজ্যগুলির সেচ ও পানীয় জলের সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে। পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন, অনিয়মিত বৃষ্টিপাত মোকাবিলাতেও কার্যকর ভূমিকা নেবে এই পরিকল্পনা।
এই প্রকল্পে রাজস্থানে ইন্দিরা গান্ধী ক্যানালের মাধ্যমে শ্রীগঙ্গানগর পর্যন্ত জল পৌঁছবে। জম্মু-কাশ্মীরে রনবীর ক্যানালের দৈর্ঘ্য ৬০ থেকে ১২০ কিমি হবে। পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও দিল্লিতে কৃষিসেচের পাশাপাশি পানীয় জল সরবরাহের বড় সুবিধা হবে।
২০২৯ লোকসভা নির্বাচনের আগে এই প্রকল্পকে “নির্বাচনী মাস্টারস্ট্রোক” হিসাবে দেখছে রাজনৈতিক মহল, যা উত্তর ভারতের ভোটব্যাঙ্কে সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে। একইসঙ্গে পাকিস্তানকে কূটনৈতিকভাবে চাপে রাখারও সুযোগ তৈরি হচ্ছে।
তবে এই প্রকল্পের বেশ কিছু পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ রয়েছে। প্রথমত, পাহাড়ি অঞ্চলে টানেল খননে ভৌগোলিক জটিলতা। দুর্বল শিলাস্তরের কারণে পাইপলাইনের প্রয়োজন হতে পারে। এছাড়াও অতিরিক্ত জলস্রোত আটকে দেওয়ার ফলে নদীব্যবস্থার স্বাভাবিক গতিপ্রকৃতি পরিবর্তিত হতে পারে।
ভারতের এই উদ্যোগ শুধু জলসম্পদ ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন নয়, বরং এটি একটি কৌশলগত, রাজনৈতিক ও পরিবেশগত সিদ্ধান্ত, যা আগামী বছরগুলোতে ভারতের উত্তরাঞ্চলের কৃষি, অর্থনীতি ও নিরাপত্তা নীতিকে নতুন রূপ দিতে পারে।