জলবায়ু পরিবর্তন ধারাবাহিক বড়সড় প্রভাব ফেলছে মানুষের জীবনে। তবে এই প্রভাব কিন্তু সব মানুষের কাছে সমান নয়। রাষ্ট্রসঙ্ঘ সমর্থিত আইআইটি খড়্গপুর গবেষণায় উঠে এসেছে যে, চরম আবহাওয়ার ঘটনাগুলো মানুষের বয়স এবং অবস্থানের উপর ভিত্তি করে আলাদা আলাদা প্রভাব ফেলে।পাশাপাশি জানা গিয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন মূলত অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল ও দরিদ্র জনগোষ্ঠী এবং উপকূলীয় অঞ্চলের বাসিন্দাদের ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে।
ইউনাইটেড নেশনস অফিস ফর ডিজাস্টার রিস্ক রিডাকশন (ইউএনডিআরআর) এর সহায়তায় আইআইটি খড়্গপুরের এক গবেষণায় তুলে ধরা হয়েছে যে তাপপ্রবাহ, বন্যা এবং খরার মতো ঘটনা একই সঙ্গে ঘটছে।এই যৌগিক জলবায়ু বিপর্যয়ের চরম ঘটনাগুলো দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। জলবায়ু তথ্যের পাশাপাশি জনসংখ্যার তথ্য ব্যবহার করে, গবেষকরা গত ৩০ বছর (১৯৯১-২০২০)এর সঙ্গে অদূর ভবিষ্যতে (২০২১-২০৫০) বিশ্ব কীভাবে এই পরিবর্তনের মুখোমুখি হতে পারে তার তুলনা করেছেন বলে জানিয়েছেন আইআইটি খড়্গপুরের এক মুখপাত্র।
গবেষণায় জানা যাচ্ছে, যারা এই পরিবর্তনের জন্য সরাসরি দায়ী, তাদের চেয়ে যারা এর জন্য কম দায়ী, তাদের উপরই বেশি ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে। গবেষণা অনুসারে, এশিয়া ও আফ্রিকায় শিশু এবং কর্মক্ষম বয়সিরা সবচেয়ে বেশি বিপদের মুখোমুখি হবে, বিশেষ করে সাব-সাহারান আফ্রিকায় যেখানে জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিপরীতে প্রবল ও ভারী বৃষ্টিপাতের পাশাপাশি তাপপ্রবাহের জেরে ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা এবং অস্ট্রেলিয়ায় বয়স্ক ব্যক্তিরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
এছাড়া গবেষণায় দেখা যাচ্ছে যে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে চরম ঠান্ডার ঘটনাগুলো কমলেও আমেরিকা, উত্তর ইউরোপ ও পূর্ব এশিয়ার কিছু অংশে সেগুলো বাড়তে পারে। অর্থাৎ এসব অঞ্চলের মানুষদের একদিকে যেমন বেশি তাপপ্রবাহের সঙ্গে লড়তে হবে, তেমনি আরও বেশি ঠান্ডার দাপটও সামলাতে হবে—যা জীবনকে আরও কঠিন ও বিপজ্জনক করে তুলবে।
গবেষণায় উঠে আসছে জলবায়ু পরিবর্তনই আগামী পৃথিবীতে নানা বিপদের প্রাথমিক কারণ হয়ে উঠছে। যেসব অঞ্চলে জনসংখ্যা স্থিতিশীল বা কমে যাচ্ছে যেমন ইউরোপে সেখানে জলবায়ু পরিবর্তন আগামী প্রজন্মের জন্য বড় বিপদের প্রধান কারণ। গবেষকরা সতর্ক করে জানাচ্ছেন বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের এই আলাদা আলাদা প্রভাব মোকাবিলায় এখনই লক্ষ্যভিত্তিক পদক্ষেপ করা জরুরি।
Leave a comment
Leave a comment