রাষ্ট্রসঙ্ঘের সাধারণ অধিবেশনের সাইডলাইনে অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন আয়োজিত ‘অ্যাট দা হার্ট অফ ডেভেলপমেন্ট : এইড, ট্রেড এন্ড টেকনোলজি’ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেন, পরিবর্তনশীল বিশ্বে এখন বৈশ্বিক কর্মশক্তির প্রয়োজন আগের চেয়ে অনেক বেশি। শুধুমাত্র জাতীয় জনসংখ্যার ভিত্তিতে অনেক দেশই এই চাহিদা মেটাতে পারবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, “এটি এক বাস্তবতা, যার থেকে পালানো যাবে না। চাহিদা ও জনসংখ্যার ভারসাম্য অনেক দেশে মেলে না। তাই আরও গ্রহণযোগ্য, আধুনিক ও কার্যকর একটি বৈশ্বিক কর্মশক্তির মডেল তৈরি করতে হবে, যা একটি বিস্তৃত বৈশ্বিক কর্মক্ষেত্রে কার্যকর হবে।”
জয়শঙ্করের এই মন্তব্য এসেছে এমন সময়ে, যখন বৈশ্বিক বাণিজ্যে নানা প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিবাসন নীতিতে কড়াকড়ি আরোপ করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে নতুন ১ লাখ মার্কিন ডলার ফি এইচ-১বি ভিসার ক্ষেত্রে, যা মূলত ভারতীয় পেশাদারদের ওপর বড় প্রভাব ফেলছে।
বিদেশমন্ত্রী বলেন, নতুন বাস্তবতায় দেশগুলোর মধ্যে ভিন্নধর্মী বাণিজ্যিক সম্পর্ক তৈরি হবে। “যেসব সিদ্ধান্ত আগে নেয়নি, এখন দেশগুলো তা নিতে বাধ্য হচ্ছে, নতুন অংশীদারিত্ব ও নতুন অঞ্চলের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে,” তিনি যোগ করেন।
তিনি উল্লেখ করেন, আজকের দিনে বাণিজ্য অনেক সহজ হয়েছে প্রযুক্তি, পরিকাঠামো ও ডিজিটাল সুবিধার কারণে। তবে বাজারে প্রবেশাধিকার নিয়েও এখন ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। “যেভাবে সরবরাহ শৃঙ্খলের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা ঝুঁকি তৈরি করে, তেমনই বাজারের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতাও বিপজ্জনক হয়ে উঠছে,” বলেন জয়শঙ্কর।
ভারতের ডিজিটাল পাবলিক ইনফ্রাস্ট্রাকচার-এর উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, “অনেক দেশই ভারতীয় মডেলকে ইউরোপীয় বা আমেরিকান মডেলের তুলনায় অনেক বেশি কার্যকর ও প্রাসঙ্গিক মনে করে।”
তিনি আরও জানান, আজকের অস্থির পরিস্থিতিতে বড় দেশগুলোর জন্য আত্মনির্ভরতা গড়ে তোলা অপরিহার্য। “বহুমেরুত্ব নিজে থেকে আসবে না, তা তৈরি করতে হবে জাতীয় সক্ষমতা দিয়ে,” বলেন জয়শঙ্কর।
বিশ্বের অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতার প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, “আজ কূটনীতির মূল প্রশ্ন হল, কীভাবে ঝুঁকি কমানো যায়, কীভাবে বেশি সহনশীল হওয়া যায় এবং অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য নীতি ও পরিকল্পনা তৈরি করা যায়। এটি আজকের পৃথিবীর জন্য এক বিশাল চ্যালেঞ্জ।”