বুদ্ধদেব পাত্র, পুরুলিয়া
পুরুলিয়ার ঝাড়খণ্ড সীমান্তঘেঁষা গ্রাম শিবডি। সেখানেই কুলদেবী মা দুর্গাকে ঘিরে তৈরি হয়েছে এক অনন্য ইতিহাস। আজ থেকে প্রায় পাঁচশো বছর আগে উত্তরপ্রদেশের উন্নাও জেলা থেকে দুই ভাই শিবরাম দুবে ও তুলারাম দুবে এসে বসতি গড়েন এই অঞ্চলে। কাশীপুরের রাজার দান করা জমিতে পরিবার নিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন তাঁরা। সেখান থেকেই শুরু হয় দুবে পরিবারের কুলদেবী মা দুর্গার আরাধনা। মাটির ঘরে, খড়ের ছাউনির তলায় শুরু হয়েছিল সেই পুজো। আশপাশের গ্রামে তখন দুর্গাপুজোর প্রচলন ছিল না। তাই শিবডির এই পুজোকে কেন্দ্র করেই ধীরে ধীরে তৈরি হয় এক ঐতিহ্য।
তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পারিবারিক বিবাদ ও বিভেদের কারণে এক মন্দিরের পুজো ধীরে ধীরে ভাগ হয়ে যায় একাধিক মন্দিরে। প্রথমে দুটি, পরে তিনটি এবং আজকের দিনে দাঁড়িয়েছে চারটি পৃথক মন্দিরে। বিভক্ত হলেও বদলায়নি নিয়মনীতি। পূর্বপুরুষদের নির্ধারিত রীতি আজও কঠোরভাবে মেনে চলা হয়। একেকটি মন্দিরে আলাদা করে দেবীর আরাধনা হলেও পুজোর পাঁচ দিন গ্রামবাসী মিলেমিশে এক পরিবারে পরিণত হয়।
এই দুর্গাপুজোর বিশেষ আকর্ষণ নবমীর দিন। স্থানীয় ভাষায় “বামুন তুড়পা” নামে পরিচিত অনুষ্ঠানটি এক অন্যরকম রূপ দেয় শিবডিকে। সাজগোজে ভিন্নতার ছোঁয়া, উৎসবের আনন্দে মেতে ওঠে গ্রামবাসী। আশপাশের গ্রাম ছাড়াও ঝাড়খণ্ড থেকেও হাজারো দর্শনার্থী এদিন শিবডি গ্রামে ভিড় জমান। গোটা গ্রামে তিল ধারণের জায়গা থাকে না। উচ্ছ্বাস, মিলন ও আনন্দের আবহে তখন চারটি মন্দিরের পুজো যেন এক পুজোতে পরিণত হয়।
আজও শিবডির দুর্গাপুজো শুধুই পারিবারিক আচার নয়, বরং ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও মিলনের প্রতীক। পারিবারিক বিভেদের ইতিহাস থাকলেও দেবী দুর্গার মহিমা চারটি মন্দিরকে বাঁধতে পেরেছে এক অটুট সূত্রে। আর সেই কারণেই ৫০০ বছরের পুরনো এই দুর্গাপুজো পুরুলিয়ার গর্ব হয়ে উঠেছে।