হাওয়া অফিসের পূর্বাভাসে শহর কলকাতায় ছিল হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি। জানানো হয়েছিল দেবীপক্ষের পঞ্চমীতে দোসর হতে পারে দমকা হাওয়াও। তবে উলম্ব মেঘের ভাসিয়ে দেওয়া বৃষ্টি যারা সদ্য দেখে ফেলেছে, তাদের কাছে এমন পূর্বভাস কোনও বাধাই নয়। তাই পাড়ার প্যান্ডেলে জাঁকিয়ে বসার আগে, সকাল সকাল সদলে বেরিয়ে পড়েছে প্যান্ডেল হপিং-এ।
অধিকাংশের কাছেই ছিল আগে ভাগে তৈরি করে রাখা তালিকা। আর তা মিলিয়ে চলছে একের পর এক সর্বজনীনের মণ্ডপসজ্জা আর প্রতিমা খুঁটিয়ে দেখার পর্ব। বস্তুতপক্ষে পঞ্চমীর সকাল থেকে এতো ভিড় কিন্তু আগে দেখেনি পুজোর কলকাতা।
কেন্দ্রীয় অফিসের পাশাপাশি এবং রাজ্য সরকারেরও বেশিরভাগ অফিস বন্ধ থাকে শনিবার। থাকে। তবে যাঁদের দফতর শনিবারও খোলা ছিল, তাঁরা কিন্তু অফিসে একবার মুখ দেখিয়ে বেরিয়ে পড়েছেন ”পুজো ” দেখতে। বেসরকারি অফিসগুলিতেও ছিল কমবেশি এমনই ছবি। আর সেকারণেই বিগ বাজেটের পুজোগুলিতে কমবয়সীদের পাশাপাশি মধ্যবয়স্কদেরও ভিড় লক্ষ্য করেছেন পুজো কমিটির সদস্যরা।
নিম্নচাপের নাছোড় বৃষ্টির কারণেই এবার কিন্তু দিনের আলোতেই তাদের পুজো পরিক্রমা পর্ব শুরু করে দিয়েছে আট থেকে আশির দল। অন্তত তৃতীয়, চতুর্থী এবং পঞ্চমীর সন্ধে পর্যন্ত, ভিড়ের বহর দেখে এমনটাই মনে করছেন অধিকাংশ সর্বজনীনের উদ্যোক্তারা। ভিড় সামাল দিতে তাঁদের সকাল থেকেই নিরাপত্তরক্ষী সহ ভলান্টিয়ার্সও রাখতে হচ্ছে।
লালবাজার সূত্রে খবর দেবীপক্ষের চতুর্থী থেকেই তাদের প্রায় পুরো পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। কমবেশি ১৪, ০০০ পুলিশ আপাতত মোতায়েন রয়েছেন প্যান্ডেল হপারদের ভিড় সামাল দিতে। শুধু পুলিশ কর্মীরাই নন, রয়েছেন এনসিসি এবং সহযোগী ইউনিটের স্বেচ্ছাসেবকরাও। প্রত্যেককেই চতুর্থ থেকে মোতায়েন গোটা মহানগরী জুড়ে।
ট্রাফিক পুলিশ সূত্রে খবর, প্যান্ডের হপারদের অতিরিক্ত ভিড়ের কারণেই দুপুরের পর থেকে সরকারি এবং বেসরকারি বাস ও মিনিবাসের গতিও নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। ভিড়ের চাপে দুর্ঘটনা এড়াতে বেলা ২ টে থেকে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে অটো কিংবা টোটো চলাচলও। ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে যাঁরা পুজো পরিক্রমায় বেরিয়েছেন, তাঁদের বেশিরভাগেরই অভিযোগ পার্কিং নিয়ে। সর্বজনীনের মণ্ডপ থেকে অনেকটা দূরে গাড়ি রাখতে হচ্ছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন অনেকেই।
গত সোমবার রাতের মাত্রাছাড়া ভারী বৃষ্টির কারণে সরকারি স্কুল-কলেজগুলিতে এবার কিছুটা আগেই পুজোর ছুটি পড়েছে। বৃহত্তর মহানগরীর অধিকাংশ বেসরকারি স্কুলে পুজোর ছুটি শনিবার থেকে শুরু। ফলে পঞ্চমীর সকাল-দুপুর আর বিকেলের ভিড়ে স্কুল আর কলেজ শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল বেশ ভালরকম। ছাত্র-ছাত্রীদের প্রায় প্রত্যেকেরই বক্তব্য, ষষ্ঠীর মধ্যেই তাদের পুজো পরিক্রমা পর্ব শেষ করে নিতে হবে। কারণ এরপরই রয়েছে পাড়ার কিংবা আবাসনের পুজোর জন্য ব্যস্ততা।
সপ্তমী থেকে নবমী পর্যন্ত রাতভর চলবে মেট্রো রেল। ব্লু লাইন এবং গ্রিন লাইন মেট্রো পুজোর ভিড়ের কথা মাথা রেখেই অতিরিক্ত পরিষেবা দেওয়ার জন্য পদক্ষেপ করেছে। তবে তৃতীয়ার সকাল থেকে কিন্তু এই দুই মেট্রো পথে শুরু হয়েছে পুজোর ভিড়। অফিসযাত্রীদের সঙ্গে প্যান্ডেল হপারদের অত্যুৎসাহী দলও সকাল সকাল মেট্রোকেই গন্তব্যে পৌঁছনোর সহজ পথ বলে মনে করেছেন। কলকাতা মেট্রো রেলের কর্তারা দৈনিক টিকিট বিক্রির সংখ্যা দেখেই এমনটা জানিয়েছেন।
সবমিলিয়ে পুজোর কলকাতা কিন্তু ফের সেই চেনা ছন্দে। শুধুমাত্র নিম্নচাপের ধাক্কায় ভিড়ের টাইমিংটাই যা এগিয়ে এসেছে। বৃষ্টি-অসুরকে বাড়তি গুরুত্ব না দিয়ে, নিজেদের মতো করেই মেতে উঠেছেন অধিকাংশ নগরবাসী।