অপারেশন সিঁদুরের মান রাখলেন সূর্য কুমার যাদব এন্ড কোং। রবিবাসরীয় দুবাইয়ের রুদ্ধশ্বাস ফাইনালে পাকিস্তানকে ৫ উইকেট হারিয়ে নবমবার এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন ভারত। কুলদীপ যাদবের বিধ্বংসী বোলিংয়ের পর গুরু গম্ভীর এবং অধিনায়ক সূর্যর কপালে জয়ের তিলক এঁকে দিল তিলক ভার্মার ৫৩ বলে অপরাজিত ৬৯ রানের ইনিংস।
এশিয়া কাপে অংশ নেওয়া নিয়ে কম ঝড়ের মুখে পড়তে হয়নি মেন ইন ব্লু-কে। অপারেশন সিঁদুরের পর কেন পাকিস্তানের সঙ্গে খেলবে ভারতীয় দল? চারিদিক থেকে ধেয়ে এসেছিল এই প্রশ্নই। এই পরিস্থিতিতে বোর্ড তথা ক্রিকেটারদের বার্তাটি ছিল স্পষ্ট। বয়কট নয়। এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দ্বৈরথকে তাঁরা বরং ধরে নিয়েছিলেন অপারেশন সিঁদুরেরই অংশ হিসেবে। যা জেতা ছাড়া ছিল না আর কোনও উপায়ই।
জিতেই ছাড়লেন সূর্য কুমার এন্ড কোং। যদিও পাকিস্তান যে লড়াই এ দিন দিয়েছে তা কি ভুলতে পারবেন ক্রিকেটপ্রেমীরা? বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন বোলারদের সামনে প্রথম উইকেটের জুটিতে ৮৪ রান যোগ করেন সাহিবজাদা ফারহান এবং ফখর জমান। সুপার ফোরের ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরির পর এ দিনও ৩৮ বলে ৫৭ করেছেন ফারহান। ৩৫ বলে ৪৬ করেন ফখর।
তাঁদের ঝোড়ো ব্যাটিং মনে করিয়ে দিচ্ছিল ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালকে। টসে হেরে প্রথম ব্যাট করতে নেমে সে দিন এভাবেই ঝড় তুলেছিলেন দুই পাক ওপেনার। এবং সে দিনও ছিলেন ফখরই। কিন্তু ওভালের সেই ফাইনালে ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামের এমন কোনও অনুপ্রেরণা ছিল না যা ছিল এ দিনের মূল চালিকাশক্তি। ফারহান ফিরতেই এ দিন যেভাবে ধস নামল পাকিস্তানের ইনিংসে আর যেভাবে সলমন আঘারা ৯.৪ ওভারে ৮৪/১ থেকে গুটিয়ে গেলেন মাত্র ১৪৬ এই তা যেন অপারেশন সিঁদুর চলাকালীন পাকিস্তানের একের পর এক জঙ্গিঘাঁটি ধ্বংসের সার্থক ইমেজারি।
কুলদীপকে দিন শুরু থেকেই আক্রমণ করেছিলেন ফারহান-ফখর। শেষ বেলায় সেই বাঁহাতি চায়নাম্যান বোলারই ৩০ রান দিয়ে তুললেন ৪ উইকেট। দুবাইয়ের উইকেটে একটা জিনিস রবিবার বার বার দেখা গিয়েছে। স্পিনাররা বলের গতি যখনই কম করে রেখেছে, তখনই বিভ্রান্ত হতে হয়েছে ব্যাটারদের। এই বিষয়টার ফায়দা তুলেই চির চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের ধসিয়ে দেন কুলদীপ, বরুণ এবং অক্ষর। তবু সহজ ছিল না জয়।
ফাইনালে এসেই ‘ল অব অ্যাভারেজ’ -এর শিকার হলেন গোটা টুর্নামেন্টে বিধ্বংসী ফর্মে থাকা অভিষেক শর্মা। ৬ বলে মাত্র ৫ রান করে দ্বিতীয় ওভারেই ফাহিম আশরাফের শিকার হন। এরপর পর পর অধিনায়ক সূর্য কুমার এবং সহ অধিনায়ক গিল ফিরতেই দ্রুত ২০/৩ হয়ে যায় মেন ইন ব্লু। এ সময়টা রীতিমতো তাদের মাথায় চড়ে বসেছিলেন পাক বোলাররা। প্রয়োজনীয় রান রেট ক্রমেই ৮ থেকে ৯, এর পর চলে যায় ১০ -এরও ওপরে। ১৪৭ -এর লক্ষ্যমাত্রা তখন মনে হচ্ছে ২৪৭। হাত থেকে বেরিয়ে যেতে বসেছে ম্যাচ।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত বেরোতে দিলেন না তিলক ভার্মা। প্রথমে সঞ্জু স্যামসনকে (২৪) নিয়ে চতুর্থ উইকেটে যোগ করলেন ৫৭ রান। এর পর পঞ্চম উইকেটে শিবম দুবেকে সঙ্গে নিয়ে ৬০ রান। তিলকের দায়িত্বসুলভ ইনিংসই শেষ পর্যন্ত এশিয়া জয়ের শিরোপা তুলে দিল বিশ্বজয়ীদের হাতে। জরুরি রান রেট ক্রমেই মাত্রা ছাড়াচ্ছে দেখেও অহেতুক ঝুঁকি নেননি তিলক। স্ট্রাইক রোটেশনের পাশাপাশি অপেক্ষা করেছেন খারাপ বলের জন্য। তাতেই বাজিমাত। যদিও উল্টোদিকে দুবেকে না পেলে তিলকের এই লড়াইও হয়ত বাঁচাতে পারত না টিম ইন্ডিয়াকে।
হার্দিক পাণ্ডিয়াকে ইদানিংকালে বলা হচ্ছে ক্লাচ প্লেয়ার। মোক্ষম মুহূর্তে অবদান রাখার জন্য। পাণ্ডিয়ার অনুপস্থিতিতে এ দিন শিবম দুবে দেখিয়ে দিলেন এ বার থেকে তাঁকেও এই তকমা দিতে হবে বৈকি। প্রথমে বল করতে এসে পাওয়ার প্লেতে ২ ওভারে মাত্র ১২ রান। এরপর ২২ বলে দুটি ছক্কা এবং দুটি চার দিয়ে সাজানো ৩৩ রানের মহামূল্যবান ইনিংস। উল্টোদিকে তিনি ছিলেন বলেই তিলককে দেখে কখনও মনে হয়নি তাঁর ওপরে কোনও চাপ আছে বলে। তা জরুরি রান রেট যতই ১০ ছাড়িয়ে যাক না কেন? গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এক বার নয়, দু-বার বিশাল ছক্কা হাঁকিয়ে দলকে খাদের কিনারা থেকে ফিরিয়ে আনেন তিনি। এমনি এমনি তো আর দুবেকে বলা হচ্ছে না, লাকি চার্ম! এমনি এমনি তো আর দেশের জার্সিতে একটিও টি-টোয়েন্টি হারেননি তিনি। দুবে প্রমাণ করে দিলেন, তিনি কী করতে পারেন। আর তিলক দেখালেন, বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা কীভাবে কঠিন মুহূর্ত থেকেও হাসতে হাসতে বেরিয়ে আসে।