রবিবার ব্রাজিলের সাও পাওলোতে একদিনের দুর্গাপুজোয় পূজার্চনা সম্পন্ন করলেন রত্নাবলী অধিকারী, বয়স ৭০। এবছর তিনি পুরোহিত হিসেবে তাঁর ১৫তম বর্ষপূর্তি উদযাপন করলেন। ২০১০ সালে পুরুষদের একচেটিয়া প্রথা ভেঙে তিনি এই যাত্রা শুরু করেছিলেন। আজ তাঁর এই উদ্যোগ বিশ্বজুড়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
সাও পাওলোর বারোয়ারি দুর্গাপুজোও রবিবার ১৫ বছরে পদার্পণ করল। পুজোর আয়োজক এবং সাও পাওলো স্কুল অব বিজনেস-এর পিএইচডি প্রার্থী অঞ্জুয়া ভট্টাচার্য জানান, “আমাদের পুজোর অন্যতম বিশেষ দিক হল এটি একজন মহিলা পুরোহিতের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত হয়। রত্নাবলীর উপস্থিতি শুধু লিঙ্গসমতার প্রতীক নয়, এটি অনুপ্রেরণাদায়কও। তাঁর নেতৃত্বে পুজো প্রকৃত অর্থেই নারীত্বের শক্তির মহিমা প্রকাশ করে।” ভারতীয় দূতাবাসও এই পুজোর তাৎপর্যকে স্বীকৃতি জানিয়েছে বলে জানান তিনি।
শুধু ব্রাজিল নয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং আয়ারল্যান্ডেও মহিলারা পুরুষ-নির্ভর পুরোহিত প্রথার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে সমতার বার্তা দিচ্ছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাউথ ক্যারোলিনার ফোর্ট মিল শহরে মৌমিতা চক্রবর্তী, যিনি একজন স্কুলশিক্ষিকা, গত বছর থেকে দুর্গা পুজার্চনা শুরু করেছেন। প্রায় ২৫০টি বাঙালি পরিবার মিলে ‘আলাপন’ নামের একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের দুর্গাপুজোতে তাঁকে পুরোহিত হিসেবে স্বাগত জানিয়েছে।
আয়ারল্যান্ডের প্রাচীনতম দুর্গাপুজো ‘সুজান’-এ মহিলারা পুরোহিতের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। সংগঠনের সভাপতি সৌম্যদীপ্ত দাস জানান, “গত বছর আমাদের জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত ছিল, যখন সদস্য স্রেয়াঞ্জনা মুখার্জি এবং সুকন্যা সান্যাল পুরোহিত হিসেবে পূজার্চনা করেন। এবছরও সান্যাল সেই ঐতিহ্য বহন করবেন।”
জার্মানির দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর স্টুটগার্টে, মৈত্রী ক্লাবের সর্বজনীন দুর্গাপুজোয় পরমিতা চক্রবর্তী পুরোহিত হিসেবে নেতৃত্ব দেন। এদিকে দেশে ফিরে, দিল্লিভিত্তিক সংগঠন ‘অনন্য নারী দুর্গাপূজা’ মহিলাদের পুরোহিত হিসেবে গ্রহণ করেছে। সংগঠনের সদস্য পৌলমী চক্রবর্তী বলেন, “আমার মনে হয় মহিলাদের নেতৃত্ব তরুণ প্রজন্মের মধ্যে পুজোর আধ্যাত্মিক দিক নিয়ে নতুন আগ্রহ তৈরি করছে।”
বেঙ্গালুরুর প্যালেস গ্রাউন্ড দুর্গাপূজা কমিটি, যার নেতৃত্বে আছেন অচিন্ত্য লাল রায়, এবছর প্রথমবারের মতো মহিলা পুরোহিতদের আমন্ত্রণ জানিয়েছে। সেখানে বারনালী চোসাল শহরের বাইরে এই প্রবণতা ছড়িয়ে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। এইভাবে বিশ্বজুড়ে ও দেশে দেশে দুর্গাপুজোয় মহিলা পুরোহিতদের নেতৃত্ব লিঙ্গসমতার এক নতুন অধ্যায় রচনা করছে। এটি শুধু প্রথা ভাঙা নয়, বরং নারীত্বের শক্তির উদযাপনও বটে।