বোধনের রাতে পাকিস্তানকে হারিয়ে ফের ক্রিকেটের এশিয়া কাপ জয় ভারতের । উৎসবের শুরুতেই দেশবাসীকে প্রত্যাশিত উপহার সূর্যকুমার যাদবদের। চলতি টুর্নামেন্টে এক-দুই নয়, টানা তিনবার সলমন আঘাদের হারাল গৌতম গম্ভীরের ক্রিকেটাররা। স্বভাবতই অপরাজিত চ্যাম্পিয়নদের ঘিরে জয়োধ্বনি আর উচ্ছ্বাস ধরা পড়েছে মহানগরী কলকাতার নানান প্রান্তে।
রিঙ্কু সিং যে মুহূর্তে হ্যারিস রউফের বলকে বাউন্ডারির বাইরে পাঠালেন, বৃহত্তর কলকাতার তখনকার গর্জনটা বোধহয় ওয়াঘা সীমান্তও পার করেছিল। শারদোৎসবে মেতে থাকা আমবাঙালিকে স্বস্তি দিয়েছে রবি রাতের ২ বল বাকি থাকতে ৫ উইকেটে জয়। একধাক্কায় বাড়িয়ে দিয়েছে রাতভর ঘুরে বেড়ানোর তাগিদ।
আসলে ক্রিকেটের বাইশ গজ ছাড়াও মাঠের বাইরের একের পর এক ঘটনাবলী উপমহাদেশের চলতি ক্রিকেট টুর্নামেন্টকে আকর্ষণীয় এবং আরও উত্তেজনাপূর্ণ করে তুলেছিল। ফলে দুর্গাষষ্ঠীর রাতে সদলবলে প্যান্ডেল হপিং-এ বেরিয়েও মণ্ডপ সজ্জা কিংবা প্রতিমা দর্শনের দিকে ঠিক মতো মনযোগ দিতে পারেননি কলকাতাবাসী। সর্বজনীন মণ্ডপের সামনে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে প্রায় সর্বক্ষণই নজর ছিল মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে।
ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে এশিয়া কাপ ক্রিকেটের এই জয় ছিল প্রত্যাশিত। কিন্তু সেই সহজ জয়কেই কঠিন করে তুলেছিল মরিয়া পাকিস্তান। ভারতীয় ইনিংসের শুরুতে যে ভাবে চেপে বসেছিলেন পাক বোলাররা, তাতেই কপালে বাড়তি ভাঁজ পড়তে থাকে প্যান্ডেল হপারদের। পুজো মণ্ডপ ছেড়ে অনেককেই দেখা যায় শপিং মল, রেস্তোরাঁ, নাইট ক্লাব কিংবা স্থানীয় ক্লাবগুলির সামনে সামনে দাঁড়িয়ে পড়তে। কারণ সেখানে তখন বড় পর্দায় দেখানো হচ্ছে সরাসরি সম্প্রচার।
শারদোৎসবের শুরুটা এমন জমজমাট হওয়ায় রীতিমতো উচ্ছ্বসিত চ্যাপ্টার ২ এর মালিক শিলাদিত্য চৌধুরী।খাবার ও পানীয়ের পাশাপাশি খেলা দেখার জন্যে প্যান্ডেল-হপারের উপচে পড়া ভিড় ছিল এখানে। জানানো হয়, হোম ডেলিভারি অনেকটা বাড়লেও, ম্যাচ শেষ না হওয়া পর্যন্ত ফাঁকা ছিল না কোনও টেবিল।
রবিরাতের সন্ধ্যে থেকে প্যান্ডেল হপারদের ভিড় ছিল মধ্য কলকাতার সাংহাই এবং মন্থনে। এখানে একাধিক স্ক্রিনে দুবাই এর ফাইনাল ম্যাচটি দেখানো হয়। “ম্যাচ চলাকালীন আমরা ‘বুমরাহ’ ফ্রায়েড চিকেন আর ‘গিল’ গ্রিলড ফিশ পরিবেশন করেছি। এম এস বার অ্যান্ড লাউঞ্জ সহ আমাদের তিনটি রেস্তোরাঁতেই গমগম করেছে প্যান্ডেল হপারদের সৌজন্যে।” বলেছেন, সাংহাই, মন্থন এবং এমএস বার অ্যান্ড লাউঞ্জের মালিক সুদেশ পোদ্দার।
উত্তর কলকাতার পাথুরিয়াঘাটা পাঁচের পল্লী ক্লাবের সদস্যরা বড় স্ক্রিনে একসঙ্গে ম্যাচটি দেখেছেন। এখানে শুভমান গিল, জসপ্রীত বুমরাহ এবং সূর্যকুমার যাদবদের কাট-আউটগুলিতে মালা পরানো হয়েছিল। স্থানীয় কাউন্সিলর ইলোরা সাহাও তাঁর সঙ্গীদের সঙ্গে নিয়ে এখানে বসেই উপভোগ করেছেন ভারত-পাকিস্তানের ব্যাট-বলের লড়াই।
” আমাদের ৫০ জনেরও বেশি সদস্য এবং স্থানীয়রা একসঙ্গে ম্যাচটি দেখেছি। বুমরাহ, কুলদীপ, তিলক ভর্মাদের সাফল্যে জয়ধ্বনিও দিই। পূজার প্রথমদিনে উৎসবের সুরটা বেঁধে দিয়েছেন মেন ইন ব্লুর সদস্যরা। তার উপর পাকিস্তানকে হারিয়ে এশিয়া কাপ জয়ের স্বাদই আলাদা।” জমজমাট ফাইনাল শেষ হতেই বলেছেন ক্লাবের এক সদস্য।