পুজোর মরশুমে রঙ, সৃজনশীলতা আর উৎসবের আবহে প্রাণ ফিরে পায় বাংলা। বাদ যায় না জার্মানিও। সেদেশের এর্লাঙ্গেন শহরেও বাঙালিদের উদ্যোগে জমজমাটভাবে পালিত হচ্ছে দুর্গোৎসব। বাঙালির কাছে দুর্গাপুজো শুধু একটি উৎসব নয়, বরং এটি হয়ে উঠেছে তাদের আত্মপরিচয়ের প্রতীক। তাই বলা হয়, বাঙালিকে বাংলার বাইরে গেলেও, দুর্গাপুজোকে বাঙালির জীবন থেকে আলাদা করা যায় না। এই আবেগ থেকেই ২০২১ সালে মাত্র তিনটি বাঙালি পরিবার মিলে শুরু হয়েছিল “দুর্গাভিল”।
এখন পঞ্চম বছরে পা দিয়ে, এর্লাঙ্গেনের দুর্গাভিল আয়োজিত পুজো ক্রমে আকারে ও মর্যাদায় বেড়ে উঠেছে। জার্মানির নানা শহর থেকে আসছেন মানুষ, যুক্ত হচ্ছেন প্রায় ৭০টিরও বেশি পরিবার, পূর্ণকালীন পেশাজীবী ও ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে গড়ে উঠেছে এক ব্যস্ত ও প্রাণবন্ত কমিউনিটি।
দুর্গাভিলের সদস্য জুবায়ের খালিদ জানিয়েছেন, চারদিনব্যাপী পুজোয় বিভিন্ন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে এবং একাদশীতে অনুষ্ঠিত হবে বিশেষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, কারণ সেদিন জার্মানিতে সরকারি ছুটি রয়েছে। তিনি আরও জানান, “আমরা পঞ্জিকা মেনে পুজোর সময়সূচি পালন করি, তবে জার্মান স্থানীয় সময় অনুযায়ী। ভারতের সঙ্গে প্রায় চার ঘণ্টার সময় পার্থক্যের কারণে যদি ভারতীয় সময় ধরা হয় তবে অনেক আচার অনুষ্ঠান ভোরবেলা বা গভীর রাতে করতে হয়। তাই স্থানীয় সময় মেনে হলেও জ্যোতিষীয় বিধান অনুযায়ীই ষষ্ঠী থেকে দশমীর আচার পালন করা হয়।”
এই পুজোর অন্যতম বিশেষ দিক হলো, প্রতিমা বাংলার কুমোরটুলির মতো আমদানি না করে, জার্মানির মাটি দিয়েই তৈরি হয়। আইটি পেশাজীবী দীপঙ্কর সরকার নিজেই প্রতিমা নির্মাণ করেন। গত বছর দুর্গাভিল থিম পুজোর উদ্যোগ নিয়েছিল। তারা হুগলির বিখ্যাত ইটাচুনা রাজবাড়ির আদলে প্যান্ডেল তৈরি করেছিল।
প্রবাসী বাঙালিদের কাছে এই সময়টা যেন ঘরকে কাছে টেনে আনার এক সুন্দর সুযোগ। জুবায়ের খালিদের কথায়, “দুর্গাভিল কেবল একটি পুজো কমিটি নয়, এটি আমাদের ঘর বানানোর এক প্রচেষ্টা। মায়ের কৈলাস থেকে যাত্রা এখানে এসে থামে আল্পস পাহাড়ের কাছে। ৬,০০০ কিলোমিটার দূরে থেকেও আমরা যেন একটা ছোট্ট কুমোরটুলি বানানোর চেষ্টা করি।”