দিব্যেন্দু মজুমদার
২০০৪ সালে থাইল্যান্ডের মাটিতে দেবীর ছবি সামনে রেখে মায়ের পুজোয় ব্রতী হয়েছিলেন প্রবাসী ভারতীয়রা। দীর্ঘ পথ পরিক্রমা করে আজ ২০২৫-এ সেই পুজোকে কেন্দ্র করেই জাতি ধর্ম নির্বিশেষে থাইল্যান্ডের এই পুজো যেন এক মিলনক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। থাইল্যান্ডে হিন্দু ধর্মসভা দ্বারা পরিচালিত শতাধিক বছরের পুরনো বিষ্ণু মন্দির প্রাঙ্গণে এই পুজোর শুরুটা করেছিলেন প্রবাসী ভারতীয়রা। ২০০৪ সালে প্রথম বছর দেবীর ছবিকে সামনে রেখে পুজো শুরুটা হয়েছিল।
শারদীয়া নবরাত্রি মহোৎসব কমিটির সম্পাদক শ্যাম বিহারী সিং জানান প্রথম বছর ছবিতেই পুজো হয়। দ্বিতীয় বছর ছোট একটা প্রতিমা কিনে এনে পুজো হয়। তৃতীয় বছর থাই শিল্পীদের দ্বারা সিমেন্ট দিয়ে তৈরি মায়ের মূর্তিকে পুজো করা হয়। কিন্তু সিমেন্টের মূর্তি প্রচন্ড ভারী হওয়ায় নানা ধরনের সমস্যা হত। তাই চতুর্থ বছর কলকাতা থেকে লক্ষ্মী, গণেশ, কার্তিক, সরস্বতী সহ মায়ের মূর্তি বিমানে করে কলকাতা থেকে থাইল্যান্ডে নিয়ে এসে পুজো করা হয়। পঞ্চম বছর থেকে পুজোর মাস দু’য়েক আগে কলকাতার মৃৎশিল্পীদের থাইল্যান্ডে নিয়ে এসে মূর্তি তৈরীর প্রচলন শুরু হয়। এখনও সেই রীতি মেনে কলকাতার মৃৎশিল্পীরা থাইল্যান্ডে এসে মায়ের মূর্তি গড়েন।
নবরাত্রি উপলক্ষে মায়ের এই পুজোকে কেন্দ্র করে বিষ্ণু মন্দির প্রাঙ্গনে মেতে ওঠেন প্রবাসী ভারতীয়রা। বর্তমানে তাদের এই পুজোয় থাইল্যান্ডের নাগরিকরাও যোগ দেন। তাদের কাছেও এই উৎসব শুধু ধর্মের গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ থাকে নি। বর্তমানে এই পুজো মিলন উৎসবে পরিণত হয়েছে। কোনওভাবে যাতে এই পুজোতে ব্যাঘাত না ঘটে তার জন্য থাইল্যান্ডের মানুষও স্বতঃস্ফূর্তভাবে পুজোর জন্য অনুদান দেন। সপ্তমীর সকালে চক্ষুদানের মধ্য দিয়ে মায়ের পুজো শুরু হয়। পুজোর দিনগুলোতে ভারতবর্ষের রাজস্থান, দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, বিহার সহ বিভিন্ন রাজ্য থেকে শিল্পীরা এসে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। পুজোপাঠ থেকে শুরু করে এই ক’দিন সমস্ত দর্শনার্থীদের জন্য প্রীতি ভোজের ব্যবস্থাও থাকে। আর এই প্রীতিভোজে খিচুড়ি, চাউল, পুরি, হালুয়া ক্ষীর সহ বিভিন্ন সুস্বাদু ভোগ বিতরণ করা হয়। প্রত্যেক বছর পুজোপাঠ করার জন্য বেনারস থেকে ৮ থেকে ১০ জন ব্রাহ্মণ পুরোহিত আসেন থাইল্যান্ডে। পুজোর প্রত্যেক দিন রাত এগারোটার পর আরতি সম্পন্ন হওয়ার পর পুজোপাঠ সম্পন্ন হয়। প্রত্যেকদিন আরতির পাশাপাশি মায়ের ভজন হয়। ২১ জন কন্যাকে মায়ের সামনে বসিয়ে কুমারী পুজো করা হয়। অষ্টমীর রাতে পুজোর সঙ্গে যুক্ত সকলেই রাত্রি জাগরণ করেন। শামবিহারী সিং আরও জানান এই পুজোর মধ্য দিয়ে সনাতনী হিন্দুদের সুখ সমৃদ্ধি ও মঙ্গল কামনার পাশাপাশি থাইল্যান্ডের রাজার এবং তার প্রজাদেরও সুখ সমৃদ্ধি ও মঙ্গল কামনা করা হয়। দশেরার দিন মাকে বরণ করার পর পাতাইয়ার কাছে শোনপুরিতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে মাকে বোটে করে সমুদ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। পাশাপাশি চারটি বোটে করে পুজো কমিটির সদস্যরা রীতিমতো পাহারা দিয়ে সমুদ্রের মাঝে নিয়ে যাওয়ার পর রীতি মেনে বিসর্জন সম্পন্ন হয়।