দুর্গাপুজোর আনন্দেও তাদের দায়িত্ববোধ ভুলে যায়নি দক্ষিণ কলকাতার অন্যতম প্রাচীন পুজো, পুটিয়ারি ক্লাব সর্বজনীন। এবার তাদের ৭৮ তম বর্ষের পুজোর থিম ‘দায়বদ্ধ’। দেবী দুর্গার আগমন ঘিরে যেমন সকল বর্ণ ও ধর্মের মানুষ একত্রিত হয়, তেমনি রাজনৈতিক বিভাজনের ঊর্ধ্বে উঠে একত্রিত হওয়ারও বার্তা দিচ্ছে এদের পুজোমণ্ডপ।
পুটিয়ারি ক্লাব সর্বজনীনের প্যান্ডেলে রাজনৈতিক বিভাজনের নানান চিত্রকর্ম রয়েছে। কিন্তু পুজো উদ্যোক্তারা এই পার্থক্যের বাইরে ঐক্যের উপরই বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। বার্তা দেওয়া হয়েছে যে, সমাজ, মানবতা এবং সমগ্র বিশ্বের প্রতি প্রতিটি সচেতন মানুষেরই কিছু না কিছু দায়িত্ব রয়েছে।
এই মণ্ডপে পুরোহিতের মন্ত্রোচারণ এবং ঢাকের বাদ্দি আশপাশের এলাকায় প্রতিধ্বনিত হয়। প্যান্ডেলের প্রাণবন্ত শৈল্পিকতা এবং আলোর রোশনাই ঝলমলিয়ে ওঠে। দর্শনার্থীরা এখানে এলেই দেখতে পান যে, নির্বাচনের আগে সমস্ত রাজনৈতিক দলের মতোই দেয়াল লিখনের মতো, এখানেও মণ্ডপ জুড়ে রয়েছে নানান চিত্রকর্ম।
এখানে এমন মঞ্চও দেখা যায়, যেখান থেকে নেতারা তাঁদের বক্তৃতা দিচ্ছেন বা তাঁদের দলের পতাকা ওড়াচ্ছেন। এই প্যান্ডেলে, প্রতিটি প্রদীপ জ্বলে ওঠা যেন সহানুভূতির প্রতীক, এবং আয়োজকদের মতে, শরতের মেঘ যেমন তাদের বিভিন্ন রঙ থাকা সত্ত্বেও এক আকাশে মিশে যায়, তেমনি দুর্গাপূজাও মানুষকে ভেদাভেদ ভুলে একত্রিত করার প্রেরণা যোগায়।
এই পূজা প্যান্ডেলের মাধ্যমে, বার্তা দেওয়া হয়েছে যে সমাজ, মানবতা এবং সমগ্র বিশ্বের প্রতি প্রতিটি ব্যক্তির দায়বদ্ধতা রয়েছে। বলা হয়েছে রঙের কোনও ধর্ম নেই, কোনও বিভাজন নেই, যদিও রাজনৈতিক বিভাজন মানুষকে একে অপরের থেকে দূরে রাখে। কোনও রাজনৈতিক দলের নাম না করেই, এখানে তুলে ধরা হয়েছে ব্যক্তি একই থাকলেও, তার রঙ কিন্তু পরিবর্তিত হয়।
একই ব্যক্তি, তিনি কখনও লাল, কোন সময়ে সবুজ। আবার কিছুদিন পরে তিনিই আবার গেরুয়া। তিন রঙে তাঁকে বিচার না করে একজন ব্যক্তি হিসেবেই তাঁকে দেখা উচিত। রঙের পার্থক্যের কারণে, বিভাজন, হিংসা বা রক্তপাতের ঘটনাও দেখা যায়। কিন্তু মা দুর্গার সামনে, সবাই একই। সবাই সমান এবং এখানে বিভক্ত করার কোনও প্রাচীর নেই।
পুজো উদ্যোক্তাদের বক্তব্য, তাদের দুর্গাপূজা কেবল আনন্দ, আলো বা উদযাপনের রঙিন রূপ নয়। বরং ঐক্য এবং ভালোবাসার বার্তা দেওয়ার একটা মাধ্যম। বলেছেন, ”৭৮ তম বর্ষের প্যান্ডেলটি এই বার্তা বহণ করে যে, ঐক্য, সম্প্রীতি এবং মানবতার প্রতিনিধিত্ব করে কেবল একটিই রঙ। দায়বদ্ধতা সকলকে সমাজের প্রতি, বন্ধুদের প্রতি এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে, মানবতার প্রতি দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানায়। আমাদের কাছে, এটি কেবল একটি উৎসব নয়। এটি একটি দায়িত্ব – ভালোবাসা, সম্প্রীতি এবং করুণার একটি পৃথিবী তৈরি করা।”