
মধুমিতা সরকার
ছাব্বিশ বেশি বাকি নেই। খেলা জমিয়ে দিতে চাইছেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা। একের পর এক ইস্যুতে রাজ্য সরকারকে চেপে ধরতে বদ্ধপরিকর। রাস্তায় নামছেন। আন্দোলন সংগঠিত করছেন। হাতে গরম মশলাও পেয়ে যাচ্ছেন। কার্যত তাঁর হাতে অস্ত্র তুলে দিচ্ছে তৃণমূল। কয়েকদিন আগেই কলকাতায় প্রবল বৃষ্টিতে জমা জল ও বারো মৃত্যু নাড়িয়ে দিয়েছে গোটা রাজ্যকে। নিজের ঘাড় থেকে দায় ঝেড়ে ফেলতে সিইএসসির ওপর দায় চাপাতে ব্যস্ত থেকেছে শাসক দল। সঞ্জীব গোয়েঙ্কাকে দুষেছেন, ধমকেছেন, ক্ষতিপূরণ দিতে বলেছেন, এমনকি মৃতদের পরিবারের একজনকে চাকরি দেওয়ার দাবিও তুলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সিইএসসি শুধু ছোট্ট করে মনে করিয়ে দিয়েছে, রাস্তার ল্যাম্পপোস্ট বা বৈদ্যুতিক খুঁটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব কলকাতা পুরসভার। অর্থাত্ জমা জলে বিদ্যুত্স্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর দায় কার্যত শাসক দলেরই।

সিইএসসি বয়ান লুফে নেয় বিজেপি। শাসক দলকে আক্রমণে ঝাঁঝরা করতে কোমর বেঁধে নেমে পড়েন শুভেন্দু, সুকান্তরা। পুজোর আগে কলকাতায় মৃত্যুমিছিল। পুজোর পরে উত্তরবঙ্গে বিপর্যয়, মৃত্যুমিছিল। ফের ময়দানে বিজেপি। রণং দেহী শুভেন্দু। ফালাফালা করছেন তৃণমূলকে।কয়েকদিন আগেই রাতভর রেকর্ড বৃষ্টিতে জলমগ্ন শহর কলকাতায় মৃত্যু হয় ১২ জনের। অপরদিকে বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গ। এখনও পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে অন্তত ২১ জনের। কলকাতার সহ নাগরিকদের মৃত্যু সহ উত্তরবঙ্গের বিপর্যস্ত পরিস্থিতির জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দায়ী করে রবিবার রানি রাসমণি রোডের সভা থেকে হুংকার দিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।বছর পেরোলেই ২৬-এর বিধানসভা নির্বাচন। রবিবারের প্রতিবাদ সভা থেকে যেন ভোটের দামামাই বাজিয়ে দিলেন শুভেন্দু। এদিনের সভা থেকে বিরোধী দলনেতা কার্যত হুমকি দিয়ে দাবি করেন, নন্দীগ্রামের থেকেও বেশি ভোটে ভবানীপুরে মমতাকে হারাবেন। একইসঙ্গে আরও একবার পিতৃপক্ষে পুজোর উদ্বোধন নিয়েও মমতাকে কটাক্ষ করলেন বিরোধী দলনেতা। এক কথায় দুর্গাপুজোর বিসর্জনের মধ্যেই ২৬-এর ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা হয়ে গেল রবিবারের সভা থেকে।তাহলে কি ছাব্বিশে ভবানীপুরে মমতা বনাম শুভেন্দু? কার্যত সেই ইঙ্গিতই দিয়ে রাখলেন বিরোধী দলনেতা।
২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে নন্দীগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ সেই কেন্দ্র থেকেই ভোটে লড়ে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে জয় পেয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা৷ এবার কি ভবানীপুরে মমতা বনাম শুভেন্দু? ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে নন্দীগ্রামের থেকেও বেশি ভোটের ব্যবধানে ভবানীপুরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তিনি হারাবেন৷ রবিবার এমনই হুঁশিয়ারি দিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী৷ একই সঙ্গে বিরোধী দলনেতা কার্যত স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়ে রাখলেন, আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচনে সম্ভবত ভবানীপুর থেকেই প্রার্থী হচ্ছেন তিনি৷ যে কেন্দ্রের বর্তমান বিধায়ক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷রবিবার

কলকাতায় দুর্গাপুজোর আগে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ১২ জনের মৃত্যুর প্রতিবাদে খোলা হাওয়া নামে একটি সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত প্রতিবাদ মিছিলে যোগ দেন শুভেন্দু৷ ঘটনাচক্রে এদিনই উত্তরবঙ্গে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে অন্তত একুশ জনের মৃত্যু হয়েছে৷ এই পরিস্থিতিতে রেড রোডে দুর্গাপুজোর কার্নিভালে মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে সরব হন বিরোধী দলনেতা৷ মুখ্যমন্ত্রীকে ‘অমানবিক’ বলেও কটাক্ষ করেন তিনি৷ মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য জানিয়েছেন, সোমবার দুপুরের মধ্যেই তিনি উত্তরবঙ্গে পৌঁছবেন৷শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘উনি মনোজ পন্থ, রাজীব কুমারদের নিয়ে রেড রোডে বসে আছেন৷ লজ্জা করে না৷ ওঁকে ছাড়ব না৷ নন্দীগ্রামের থেকে বেশি ভোটে ওঁকে ভবানীপুর থেকে হারাব৷ আগামী বছর বদলাও হবে, বদলও হবে৷’ শুধু তাই নয়, রাজ্যে এসআইআর হলে সেই প্রক্রিয়াকে ভোটের আগে সেমিফাইনাল হিসেবেও মন্তব্য করেন বিরোধী দলনেতা৷
তিনি দাবি করেন, এসআইআর হলে ভোটার তালিকা থেকে অন্তত ১ কোটি ভুয়ো ভোটারের নাম বাদ দিতে হবে কমিশনকে৷২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে নন্দীগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ সেই কেন্দ্র থেকেই ভোটে লড়ে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে জয় পেয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা৷ এর পর উপনির্বাচনে তাঁর পুরনো কেন্দ্র থেকে ভোটে লড়ে জয় পান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পর একাধিক বার ভবানীপুর থেকেও মুখ্যমন্ত্রীকে হারানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা৷শুভেন্দুর রবিবাসরীয় হুমকি যেন ছাব্বিশে রাজ্যে বিধানসভা ভোটের মূল সুর বেঁধে দিল।