
বন্যাকবলিত উত্তরবঙ্গে বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু ও বিধায়ক শঙ্কর ঘোষের ওপর হামলায় তীব্র ভাষায় ক্ষোভ প্রকাশ করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গোটা ঘটনাকে রাজ্যের তৃণমূল সরকারের দুর্বল আইনশৃঙ্খলা ও শূন্য সহানুভূতির প্রকাশ বলে তোপ দাগেন তিনি।
সোমবার বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শনে যান খগেন মুর্মু ও শঙ্কর ঘোষ। তাঁদের কনভয় দুর্যোগকবলিত নাগরাকাটার বামনডাঙা এলাকায় পৌঁছলে একটি গাড়ি সামনের দল থেকে পিছিয়ে পড়ে। ঠিক তখনই কয়েকশো মানুষ নদীর ধারে জড়ো হয়ে পাথর ছুড়তে শুরু করে বলে অভিযোগ।
শঙ্কর ঘোষের ফেসবুক লাইভে দেখা গেছে, খগেন মুর্মুর মাথা, কপাল, গাল ফেটে রক্ত ঝরছে। গাড়ির সব কাচ ভেঙে গেছে। পিছনের সিটে শুয়ে রয়েছেন তিনি। সামনের সিটে বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ। রক্তাক্ত অবস্থায় মুর্মুকে চালসা হাসপাতালে নিয়ে যান শঙ্কর। সেখানেই তাঁর প্রাথমিক চিকিৎসা করা হয়। পরে তাঁকে শিলিগুড়িতে নিয়ে আসা হয়।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক্স-এ লিখেছেন, “যেভাবে আমাদের দলের সাংসদ ও বিধায়ক সহ সহকর্মীদের ওপর পশ্চিমবঙ্গে হামলা হয়েছে, তা ভয়াবহ ও নিন্দনীয়। এটি প্রমাণ করে, তৃণমূল কংগ্রেসের অসংবেদনশীলতা এবং রাজ্যের সম্পূর্ণ ভেঙে পড়া আইনশৃঙ্খলার চিত্র।”
তিনি আরও লেখেন, “আমি চাই, পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও তৃণমূল কংগ্রেস এই কঠিন সময়ে হিংসাত্মক আচরণ না করে মানুষের পাশে দাঁড়াক। এই দুর্যোগের সময় রাজনীতি নয়, প্রয়োজন মানবিক সহায়তা।”
বিজেপি সূত্রে খবর, সাংসদ ও বিধায়ক দুর্গত মানুষদের সঙ্গে যখন কথা বলছিলেন, তখনই হঠাৎ এই আক্রমণ হয়। বিজেপির দাবি, যারা হামলা চালিয়েছে তারা তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতী। তাদের ছবি দিয়ে, নাম লিখে পোস্ট করেন শুভেন্দু অধিকারী, ছবি দিয়ে পোস্ট করেন কলকাতার বিজেপি কাউন্সিলর সজল ঘোষও। দলের মুখপাত্র অমিত মালব্য এক্স-এ লিখেছেন, “তৃণমূলের জঙ্গলরাজ চলছে বাংলায়! উত্তর মালদহের দু’বারের সাংসদ ও সম্মানিত আদিবাসী নেতা খগেন মুর্মু ত্রাণ কাজে যাচ্ছিলেন, তখন তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা তাঁর ওপর হামলা চালায়।”
মোদির এমন অভিযোগের পরেই সরব হন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। ভারতের প্রধানমন্ত্রী প্রাকৃতিক বিপর্যয়কে রাজনৈতিক রং দিতে বেছে নিয়েছেন বলে তোপ দেগেছেন মমতা। উত্তরবঙ্গের মানুষ যখন ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধসের পরিণতির সঙ্গে লড়াই করছেন তখন একে তিনি দুর্ভাগ্যজনক এবং গভীরভাবে উদ্বেগজনক বলে ব্যখ্যা করেছেন।
মুখ্যমন্ত্রী এক্স-এ লেখেন, “প্রধানমন্ত্রী কোনও যাচাই করা প্রমাণ, আইনি তদন্ত বা প্রশাসনিক রিপোর্ট ছাড়াই সরাসরি তৃণমূল ও রাজ্য সরকারকে দোষারোপ করেছেন। এটি শুধু রাজনৈতিক নীচতা নয়, এটি সংবিধানিক শপথেরও পরিপন্থী আচরণ। গণতন্ত্রে আইন নিজের গতিতেই চলা উচিত—কোনও রাজনৈতিক বক্তৃতা বা টুইট নয়, বরং আইনি প্রক্রিয়াই দায় নির্ধারণ করবে।”