
ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (MIT) আজ যেন কিছুটা খালি হয়ে গেছে। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ও এস্থার ডাফলো এবার MIT-কে বিদায় জানাচ্ছেন। শুধু বিদায় নয়, তাঁরা নতুন ইতিহাস গড়তে চলেছেন সুইজারল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব জুরিখে। আগামী বছর জুলাই থেকে তাঁরা লেমান ফাউন্ডেশন প্রফেসর অব ইকনমিক্স হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেবেন এবং গড়ে তুলবেন লেমান সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট এডুকেশন অ্যান্ড পাবলিক পলিসি। ২৬ মিলিয়ন সুইস ফ্রাঁ বা ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ২৯০ কোটি টাকা অনুদানে তৈরি এই কেন্দ্রটি শুধু গবেষণা নয়, বরং বাস্তব নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রেও আন্তর্জাতিক মাপকাঠিতে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।
আমেরিকার নতুন প্রশাসন এবং শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে গবেষণার অর্থ বরাদ্দ নিয়ে সংঘাত ক্রমেই তীব্র হচ্ছে। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ও বৈচিত্র্যের ভিত্তিতে ভর্তি ও নিয়োগের ওপর বিধিনিষেধ আরোপে যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষাব্যবস্থা এক নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে। MIT, ব্রাউন, ভার্জিনিয়া, ডার্টমাউথ ও ভ্যান্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত এই নীতির পুনর্মূল্যায়ন শুরু করেছে। এই পরিস্থিতিতেই অভিজিৎ-ডাফলো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, নতুন অধ্যায় শুরু করার, যেখানে গবেষণা, ছাত্রছাত্রীদের পরামর্শ এবং নীতি নির্ধারণের বাস্তব প্রয়োগ এক সঙ্গে মিলবে।
জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান ফ্লোরিয়ান শয়ের এক্সের মতে, নোবেলজয়ী এই দম্পতির আগমন জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার মান এবং আন্তর্জাতিক মর্যাদা আরও বৃদ্ধি করবে। এমন একটি সুযোগে পৌঁছনো শুধুই কেরিয়ারের সাফল্য নয়, বরং আন্তর্জাতিক অর্থনীতির জ্ঞানকে সমাজের কল্যাণে রূপান্তর করার এক নতুন অধ্যায়।
নোবেলজয়ী দম্পতির নতুন কেন্দ্র শুধু গবেষণার স্থান নয়; এটি হবে এমন একটি মঞ্চ যেখানে বাস্তব অর্থনৈতিক সমস্যাগুলোর সমাধান করা হবে। অভিজিৎ বলেন, জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের গবেষণা ও নীতি-নির্ভর কাজের জন্য আদর্শ পরিবেশ দেবে। ডাফলো যোগ করেছেন, নতুন কেন্দ্র আমাদের আগের কাজকে আরও বিস্তৃত করবে, যেখানে গবেষণা, ছাত্রছাত্রীদের পরামর্শ এবং নীতি প্রয়োগ এক সঙ্গে ঘটবে।
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর শিক্ষানীতি এবং আন্তর্জাতিক চাপের প্রেক্ষাপটে এই পদক্ষেপ শুধু ব্যক্তিগত নয়, বরং আন্তর্জাতিক গবেষণার স্বাধীনতা ও উদ্ভাবনী শক্তির প্রতীক। জুরিখে এই কেন্দ্র বিশ্বের অর্থনীতি ও নীতি নির্ধারণের মানচিত্রে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।