
কালীপুজোর রাত। বাঙালির ঘুম নেই। উঠোনে জ্বলে প্রদীপ, বাজির আওয়াজ চারদিকে। এসবের মধ্যেই রান্নাঘরে তখন ফুটছে এক অদ্ভুত খাবার, নিরামিষ মাংস, মানে মাংস ছাড়াই “মাটন কারি”! ভাবে যায়? শুনতে অবাক লাগলেও, এটাই সত্যি!
বাঙালির উৎসবের পাতে মাংস না থাকলে যেন জমে না। কিন্তু কালীপুজোর রাতে বেশিরভাগ বাড়িতেই পুজোর নিয়মে মাছ-মাংস খাওয়া বারণ। তবু খাদ্য রসিক বাঙালি খুঁজে পেয়েছে চমৎকার এক সমাধান, মাংসের মতোই দেখতে ও খেতে এমন এক তরকারি, যেখানে আসল মাংসের বদলে থাকে এঁচোড়।
রান্নার ধরণ একেবারে ঐতিহ্যবাহী মাটন কারির মতোই, সরষের তেলে পেঁয়াজ ভেজে, আদা-রসুন বাটা, গোটা গরম মসলা, লাল মরিচ আর আলু দিয়ে ধীরে ধীরে রান্না হয় এই পদ। গন্ধে এমনই টান, যে অনেক সময় মাংসপ্রেমীরাও ভুল করে বসেন, এটা আসল মাটন নাকি নিরামিষ!
অনেকে এখন সোয়া নাগেটও যোগ করেন, তবে খাঁটি বাঙালি রান্নায় এঁচোড়ের গুরুত্বই আলাদা। ভাষার খেলাও এখানে গুরুত্বপূর্ণ, “নিরামিষ মাংস” বলাটাই যেন ঐতিহ্য আর আকাঙ্ক্ষা বজায় রাখার এক উপায়।
পুজোর রাতে এই তরকারি যখন ভাত বা লুচির সঙ্গে পরিবেশন করা হয়, তখন ৮ থেকে ৮০ সবাই একসঙ্গে হাসতে হাসতে খেয়ে নেয়। কেউ প্রশ্ন করে,“এটা সত্যিই মাংস নয়?”
আজকাল শুধু কালীপুজোয় নয়, রবিবারের দুপুরের ভোজে, নিরামিষ মেনুতে, এমনকী কলকাতার রেস্তোরাঁতেও এই পদ পাওয়া যায়। অনেকে বলেন, এটা বাঙালির রান্নাঘরের বুদ্ধি আর ঐতিহ্যের দারুণ এক উদাহরণ।
আসলে “নিরামিষ মাংস” শুধু একটি খাবার নয়, এটি এক গল্প, কীভাবে নিয়ম না ভেঙেও আনন্দকে জিইয়ে রাখা যায়, তারই উদাহরণ। কালীপুজোর এই রাত তাই শুধু ভক্তির নয়, মজার, হাসির আর রসনাবিলাসেরও উৎসব।