
বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে চলছে এক অদ্ভুত নীরব যুদ্ধ। যেখানে বিনিয়োগকারীর আশা-ভরসার জায়গা দখল করেছে ভয়, সন্দেহ আর ষড়যন্ত্রের গন্ধ। দীর্ঘদিনের মন্দা কাটিয়ে যখন বাজার ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে, ঠিক তখনই অভিযোগ উঠছে ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের কিছু অসাধু প্রভাবশালী ব্যক্তি নাকি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার ছত্রছায়ায় বাজার ধ্বংসের ষড়যন্ত্রে নেমেছে।
অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুস এবং অর্থ উপদেষ্টা দল একসঙ্গে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলার জন্য নিরলস পরিশ্রম করছেন। কিন্তু এই উত্থান যেন সহ্য করতে পারছে না এক বিশেষ চক্র। তাদের লক্ষ্য বাজারকে ক্রেতাশূন্য করে তুলতে হবে, বিনিয়োগকারীর আস্থা ভেঙে দিতে হবে, আর দেশের অর্থনীতিকে হাঁটুর গেড়ে বসাতে হবে।
অভিযোগের তালিকা দীর্ঘ, নামগুলো আরও বিস্ফোরক। সালমান এফ রহমান, যিনি এখন জেলের অন্ধকারে, তাঁর ঘনিষ্ঠদের দিকেই অভিযোগের তির। বলা হচ্ছে, বেক্সিমকোর জামান, ফার্স্ট সিকিউরিটি মার্চেন্ট ব্যাংকের রানা, প্রিমিয়ার ব্যাংক সিকিউরিটিজের সিওও আব্দুর রউফ, এবং আরও অনেকে একযোগে বাজারে নেগেটিভ সেন্টিমেন্ট তৈরি করছেন। প্রতিদিন ইচ্ছাকৃতভাবে শেয়ার কম দামে বিক্রি করে বাজারে আতঙ্ক ছড়ানোর চেষ্টা চলছে যেন বিনিয়োগকারীরা ভয়ে পালিয়ে যায়।
রউফের নাম এখন এই অভিযোগের কেন্দ্রে। জানা গেছে, তাঁর নামে নাকি রয়েছে ৩০ কোটি টাকার ফিক্সড ডিপোজিট, ১০ কোটি টাকার চারটি বিলাসবহুল গাড়ি, ঢাকাজুড়ে শত কোটি টাকার সম্পত্তি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলির নথিতেও তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে, এমনকি গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও নাকি জারি হয়েছে। অভিযোগ, প্রাক্তন আওয়ামী নেতা ও প্রিমিয়ার ব্যাংকের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ডা. ইকবালের ঘনিষ্ঠ এই ব্যক্তি বিগত সরকারের আমলে সালমান এফ রহমানের সঙ্গে মিলে পুঁজিবাজারের কৃত্রিম ওঠানামা ঘটিয়ে শত শত কোটি টাকা লোপাট করেছেন।
ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের ভেতরে নাকি গড়ে উঠেছে এক “মাফিয়া বোর্ড” যেখানে নিয়ন্ত্রক দপ্তরের কিছু কর্মকর্তা, ব্রোকার মালিক, এবং অর্থপুষ্ট রাজনৈতিক ঘনিষ্ঠরা হাত মিলিয়েছেন। আইনের তকমা লাগিয়ে, তদন্তের নামে ঘুষ আদায় করে তারা নাকি কোটি কোটি টাকা পাচার করছে। শুনে মনে হয় একটা স্টক এক্সচেঞ্জ নয়, যেন কোনো ছায়া সাম্রাজ্য চলছে রাজধানীর মাঝখানে।
এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ বিনিয়োগকারীর অবস্থাই সবচেয়ে দুর্বিষহ। একদিকে বাজারে আতঙ্ক, অন্যদিকে প্রতিদিনের ক্ষতির ঝড়। যে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলতে সরকার ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন প্রাণপাত করছে, সেটাই আজ ষড়যন্ত্রের শিকার।
বাংলাদেশের অর্থনীতি যখন ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে, তখন এই ধ্বংসাত্মক চক্র যেন এক কালো ছায়ার মতো তার ওপর ভর করছে। প্রশ্ন একটাই এদের লাগাম টানবে কে? পুঁজিবাজারের ভবিষ্যৎ কি তবে এই অদৃশ্য মাফিয়া চক্রের হাতেই বন্দি?