
৯/১১ সন্ত্রাসী হামলার মূলহোতা ও এককালে বিশ্বের অন্যতম ওয়ান্টেড জঙ্গি ওসামা বিন লাদেন নাকি নারীর ছদ্মবেশে আফগানিস্তান থেকে পালিয়েছিলেন— এমনই বিস্ফোরক দাবি করেছেন মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা সিআইএর প্রাক্তন কর্মকর্তা জন কিরিয়াকু।
১৫ বছর সিআইএ-তে কর্মরত থাকা কিরিয়াকু এক সাক্ষাৎকারে জানান, তৎকালীন মার্কিন কেন্দ্রীয় বাহিনীর কমান্ডারের অনুবাদক আসলে একজন ‘আল-কায়েদা সদস্য’ ছিলেন, যিনি মার্কিন সেনাবাহিনীতে ঢুকে পড়েছিলেন গোপনে।
জন কিরিয়াকু, যিনি পাকিস্তানে সিআইএর কাউন্টার টেরর অপারেশনের প্রধান ছিলেন, এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “আমরা বিশ্বাস করেছিলাম যে তোরাবোরা পাহাড়ে আমরা ওসামা বিন লাদেন ও আল-কায়েদা নেতৃত্বকে ঘিরে ফেলেছি। কিন্তু আমরা জানতাম না যে কমান্ডারের অনুবাদক আসলে একজন আল-কায়েদা সদস্য, যিনি মার্কিন সামরিক বাহিনীতে ঢুকে পড়েছিলেন।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা লাদেনকে বলেছিলাম পাহাড় থেকে নেমে আত্মসমর্পণ করতে। অনুবাদক জেনারেল ফ্র্যাংকসকে বোঝায় যে লাদেন কিছু সময় চায়, তারা নারী ও শিশুদের সরিয়ে নেবে, তারপর আত্মসমর্পণ করবে। কিন্তু ভোরে দেখা গেল আমরা প্রতারিত হয়েছি, তোরাবোরার গুহাগুলো ফাঁকা।”
এর পর থেকেই লাদেনের সন্ধান অভিযান পাকিস্তানে ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে তিনি প্রায় এক দশক লুকিয়ে ছিলেন। অবশেষে ২০১১ সালের মে মাসে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে মার্কিন নেভি সিল বাহিনীর অভিযানে তিনি নিহত হন।
কিরিয়াকুর ভাষায়, “শেষ পর্যন্ত যা ঘটেছিল তা হলো, লাদেন নারী সেজে এক পিকআপ ট্রাকের পেছনে বসে অন্ধকারের মধ্যে পাকিস্তানে পালিয়ে যায়।”
তিনি আরও জানান, ৯/১১ হামলার পর তোরাবোরা পর্বতমালায় আল-কায়েদা জঙ্গিদের কোণঠাসা করা হলেও, অনুবাদকের প্রতারণার কারণেই লাদেনরা পালাতে সক্ষম হয়েছিল।
এছাড়াও, কিরিয়াকু অভিযোগ করেন যে তৎকালীন পাকিস্তান প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশারফ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন। তাঁর ভাষায়, “আমরা মূলত মোশারফকে কিনে নিয়েছিলাম। যুক্তরাষ্ট্র স্বৈরশাসকদের সঙ্গে কাজ করতেই পছন্দ করে, কারণ তখন জনগণের মতামত বা সংবাদমাধ্যমের চিন্তা করতে হয় না। আমরা তাঁকে সামরিক ও অর্থনৈতিক সাহায্যের নামে কোটি কোটি ডলার দিয়েছিলাম। বিনিময়ে, তিনি আমাদের যা ইচ্ছা তাই করতে দিতেন।”
উল্লেখ্য, ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে সংঘটিত ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের টুইন টাওয়ার ধ্বংসের সন্ত্রাসী হামলায় প্রায় ৩,০০০ মানুষ প্রাণ হারান। সেই হামলার মূলচক্রী ছিলেন ওসামা বিন লাদেন, যাকে ২০১১ সালে মার্কিন বাহিনী হত্যা করে।
