
বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে পুরনো এক চক্র গ্যাম্বলার মিজান, তার ভাই মাহমুদ ও সরকারি কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জয়। দীর্ঘদিন ধরেই এই ত্রয়ী শেয়ারবাজারে গোপনে কারসাজির মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সর্বস্বান্ত করে চলেছে। বাজারে “গ্যাম্বলার মিজান” নামটি এখন এক আতঙ্কের প্রতীক, প্রায় সকল বিনিয়োগকারীই তার নাম জানেন।
সাম্প্রতিক সময়ে এই চক্রের নজর ছিল কয়েকটি নির্দিষ্ট কোম্পানির শেয়ারের ওপর প্যারামাউন্ট ইন্সুরেন্স, মুন্নু সিরামিক, গ্লোবাল ইন্সুরেন্স, জি বি পাওয়ার, কন্টিনেন্টাল ইন্সুরেন্স এবং ন্যাশনাল ফিড। কম দামে বিপুল পরিমাণ শেয়ার কিনে তারা একযোগে দাম বাড়িয়ে বাজারে গরম করে তোলে। যখন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা উচ্চ দামে সেই শেয়ার কিনে ঝাঁপিয়ে পড়ে, তখনই তারা বিক্রি করে মুনাফা তুলে নেয়। এর ফলে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, বাজারে তৈরি হয় অস্থিরতা, আর গ্যাম্বলার চক্রের পকেটে চলে যায় কোটি কোটি টাকা।
তদন্তে জানা যায়, এই চক্রের পেছনে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন রূপগঞ্জের ইউএনও পদে কর্মরত সাইফুল ইসলাম জয়। তার প্রশাসনিক প্রভাব কাজে লাগিয়ে তিনি মিজান ও মাহমুদের লেনদেনকে সুরক্ষা দেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সরকারি দায়িত্বে থেকে শেয়ারবাজারে সরাসরি জড়িত থাকা আইনত অপরাধ হলেও প্রভাবশালী পরিচয়ের কারণে এখনো তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এমনকি ১৯৯৫ সালে উত্তরবঙ্গে সার কেলেঙ্কারির সঙ্গে গ্যাম্বলার মিজানের নাম জড়িয়ে ছিল। সে সময় ১৮ জন কৃষক হত্যার মামলায় সে ছিল প্রধান আসামি, এখনো সে মামলার পলাতক। অতীতের অপরাধ থেকে পার পেয়ে আজ সে শেয়ারবাজারে “গ্যাম্বলিং” করে চলছে প্রকাশ্যে। রেমন্ড সিকিউরিটিজ, সিটি ব্রোকারেজ, উত্তরা ব্যাংক, এনআরবি সিকিউরিটিজ ও এনএলআই সিকিউরিটিজসহ একাধিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তারা লেনদেন চালায়।
বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা এর আগে এই চক্রের নামে জরিমানা আরোপ করলেও তা আদায় হয়নি। ফলে তাদের দৌরাত্ম্য আরও বেড়ে গেছে। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি, বাজারে আস্থা সংকট এবং স্বচ্ছতা নষ্টের মূল কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এমন অদৃশ্য গ্যাং।
শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ এখন অনেকের কাছে জুয়া খেলার মতো মনে হচ্ছে, যার নেপথ্যে রয়েছে গ্যাম্বলার মিজান চক্রের মতো ধূর্ত খেলোয়াড়রা। প্রশাসনের অভ্যন্তরে থাকা সহযোগীরা যদি এই দুষ্টচক্রকে রক্ষা করে, তবে বাজারে স্থিতিশীলতা ফেরানো সম্ভব নয়। এখন সময় এসেছে এই চক্রের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার নইলে বিনিয়োগকারীদের বিশ্বাস আর ফিরে পাওয়া যাবে না।
