
আর কোনও কথা নয়। সুপার কাপের সেমিফাইনালে ইস্টবেঙ্গলই। শুক্রবার ফাতোরদায় মেগা ম্যাচের আগে ডেম্পোর কাছে মোহনবাগান আটকে যাওয়ায়, এবং সেইসঙ্গে অস্কার ব্রুজোঁর ছাত্ররা চেন্নাইয়ান এফসিকে ৪-০ হারানোর সুবাদে যে সবথেকে তাৎপর্যপূর্ণ যে সমীকরণটা তৈরি হয়েছিল, শেষপর্যন্ত নির্ণায়ক হয়ে দাঁড়াল সেটাই। গোল পার্থক্যে এগিয়ে থাকার সুবাদে গ্রুপের শীর্ষস্থানীয় দল হয়ে শেষ চারের টিকিট নিশ্চিত করল লাল-হলুদ ব্রিগেড। সেই সঙ্গে আরও একটা হাইভোল্টেজ ডার্বির আশায় হাপিত্যেশ করা বাঙালির কপালে জুটল একটা আদ্যন্ত পানসে, গোলশূন্য ম্যাচ।
ডেম্পোকে সেমির দৌড়ে টিকে থাকতে হলে বিকেলের ম্যাচে অন্ততঃ ৪-০ হারাতেই হত চেন্নাইয়ান এফসিকে। এই ম্যাচ ১-১ ড্র হতেই নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল বাংলার কোনও একটি দলের সেমিফাইনালে খেলা। ডার্বির মহামঞ্চ পরিণত হয় ভার্চুয়াল নক আউটে। অন্ততঃ সঞ্জীব গোয়েঙ্কার দলের জন্য তো বটেই। শেষ চারে পৌঁছতে এই ম্যাচ জিততেই হত তাদের। এই পরিস্থিতিতে যে খেল তারা দেখাল তাতে এ বার অন্ততঃ কোচ মোলিনার চাকরি বাঁচানো কিছুটা হলেও কঠিন হয়ে পড়বে বলেই মনে হচ্ছে।
যে কোনও মূল্যে জিততেই ম্যাচ। তারপরও মাত্র একজন স্ট্রাইকার— জেমি ম্যাকলারেনকে নিয়েই খেলতে নামল মোহনবাগান। কোচের চোখে কামিংস, দিমি, রবসনরা যেন ছিলেন শো-কেশে সাজিয়ে রাখার পুতুল। এভাবেই গোটা ম্যাচ জুড়েই সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার চিহ্নমাত্র দেখা গেল না মোলিনার স্ট্র্যাটেজিতে। তাই দ্বিতীয়ার্ধে মোহনবাগান আক্রমণের গতি খানিকটা বাড়ানোর পর দিমি-কামিংসদের নামিয়েও লাভ হয়নি কিছু। প্রথমার্ধে বিশাল কাইথকে বেশ কয়েকবার কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হলেও মেরিনার্সের সিংহভাগ আক্রমণ মাঝ মাঠেই শেষ হয়ে যাওয়ায় ইস্টবেঙ্গলের গোলরক্ষক গিলের কাছে বল সেভাবে আসেইনি। যদিও ৪৬ মিনিটে একেবারে সহজ সুযোগ নষ্ট করেন লিস্টন কোলাসো। আপুইয়ার ভাসানো বলে ঠিকমত হেড দিতে না পারায় তা বেরিয়ে যায় গোলপোস্টের ওপর দিয়ে।
দ্বিতীয়ার্ধে বিদেশিরা নামায় কিছুটা বদলায় ছবিটা। অবশ্য তাতেও মোটের ওপর লাভের লাভ কিছু হয়নি। খেলা শেষের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছুটা রক্ষণাত্মক হয়ে পড়ে মশাল বাহিনী। সেই সুযোগে বল পেয়েছিলেন কামিংস। তবে তাঁর শট প্রতিহত হলেও ফিরতি বল পেয়েছিলেন রবসন। মোহনবাগানের দুর্ভাগ্য, সেই শটও বারের ওপর দিয়ে বেরিয়ে যায়। একইভাবে ম্যাচের ৬২ মিনিটে পর অপ্রত্যাশিত সুযোগ এসেছিল ইস্টবেঙ্গলের হামিদ আহাদাদের কাছেও। বক্সের মধ্যে বল পায়ে তিনি একা পেয়ে যান গোলরক্ষক কাইথকে। তবু গোল করতে পারেননি। হামিদের জোরালো শট আটকে দেন কাইথ। এর ঠিক আগের মিনিটেই ৬১ জয় গুপ্তার শটও বাঁচিয়েছিলেন মোহনবাগানের গোলরক্ষক।
এর আগে প্রথমার্ধের ২৪ মিনিট নাগাদও একটি সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করে লেসলি ক্লডিয়াস সরণির ক্লাব। মিগুয়েলের ক্রস থেকে বাড়ানো বলে হেড করেন আগের দিন চেন্নাইয়ান এফসির বিরুদ্ধে জোড়া গোলের মালিক বিপিন সিং। বারে লেগে বেরিয়ে যায় সেই বল। এই সুযোগগুলি হাতছাড়া না করলে এ দিন অন্ততঃ ৩ থেকে ৪ গোলে জয় পেতে পারত ইস্টবেঙ্গল। যদিও গোটা সময় জুড়েই তাদের খেলায় পরিকল্পনার ছাপ ছিল সুস্পষ্ট। ডার্বি ড্র হলেও যে বৈচিত্র্য এ দিন ব্রুজোঁর পরিকল্পনায় দেখা গিয়েছে তা নিঃসন্দেহে সেমিফাইনালের আগে স্বস্তিতে রাখবে সমর্থকদের।
