
কলকাতার লাগোয়া গড়িয়ার পাটুলিতে একসময় ছিল শহরের অন্যতম আকর্ষণ ভাসমান বাজার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে শুরু হওয়া এই প্রকল্প এক সময় শহরবাসীর কাছে এক অনন্য স্বপ্নের বাস্তব রূপ ছিল। খালের জলে সারি সারি নৌকার উপর গড়ে উঠেছিল দোকানপাট, কাঠের সেতু পেরিয়ে ক্রেতারা চড়তেন সেই নৌকায়। মাছ, মাংস, সবজি, ফল থেকে শুরু করে মনিহারি ও স্টেশনারি সবই মিলত এক জায়গায়। জলের উপর ভাসতে ভাসতে বাজার করা যেন ছিল এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা।
কিন্তু আজ সেই স্বপ্নের বাজার ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। বহুদিন ধরে রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়া, নৌকাগুলির সংস্কার না হওয়া এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে একে একে সব নৌকাই ভেঙে পড়েছে। একসময় প্রায় দুই শতাধিক নৌকা নিয়ে জমজমাট বাজারটি এখন ইতিহাস। কাঠের সেতুগুলিও ভেঙে পড়ে রয়েছে, নৌকার চিহ্নগুলিতে এখন জঞ্জাল আর শেওলা।
এই ধ্বংসস্তূপেই আজ আশ্রয় নিয়েছেন কয়েকজন বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষ। কেউ নিজের পুরনো দোকানের জায়গাতেই তৈরি করেছেন অস্থায়ী ঘর, কেউ আবার নৌকার ভাঙা অংশে মাথা গুঁজে আছেন। সকালের দিকে দু-একটি দোকান খুলে বেচাকেনা করার চেষ্টা হয়, তবে সেই বিক্রি দিয়ে সংসার চলে না। দিন গুজরানই বড় চ্যালেঞ্জ।
স্থানীয়দের দাবি, সরকার বা প্রশাসনের তরফে কোনো উদ্যোগ নেই। যারা এখনো নৌকাগুলো আগলে বসে আছেন, তাঁদের একটাই চাওয়া একটি স্থায়ী আশ্রয় ও জীবিকার নিরাপত্তা। বহু বছর ধরে তারা অপেক্ষা করছেন পুনর্বাসনের জন্য।
কখনো মানুষের ভিড়ে মুখরিত সেই ভাসমান বাজার আজ নিঃস্তব্ধ, কেবল বাতাসে ভেসে আসে জলের গন্ধ আর পুরনো দিনের স্মৃতি। প্রশ্ন একটাই এই মানুষগুলোর স্বপ্ন কি আবারও জেগে উঠবে, নাকি ধ্বংসস্তূপেই হারিয়ে যাবে পাটুলির সেই ভাসমান স্বপ্ন?
