
ইনফোসিসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা নারায়ণ মূর্তি আবারও দীর্ঘ কর্মঘণ্টার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ভারতের তরুণ সমাজকে নতুন বিতর্কের কেন্দ্রে এনে দিয়েছেন। তাঁর মতে, দেশের দ্রুতগতির উন্নয়নের জন্য সপ্তাহে ৭২ ঘণ্টা কাজ করার মানসিকতা তৈরি করা সময়ের দাবি। চিনের বহু আলোচিত ‘৯-৯-৬’ কর্মসংস্কৃতিকে সামনে রেখে তিনি বলেন, ভারতের অর্থনীতিকে দ্রুত এগিয়ে নিতে হলে কঠোর পরিশ্রমই হতে পারে একমাত্র পথ।
চিনে দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত ছিল এমন একটি পদ্ধতি, যেখানে কর্মীরা সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত, সপ্তাহে ছয় দিন কাজ করতেন। মূর্তির যুক্তি, এই ধরনের কর্মচাপই কোনও দেশের উৎপাদনশীলতা বাড়িয়ে তাকে বিশ্ব প্রতিযোগিতায় এগিয়ে দেয়। তবে এই মডেলকে ২০২১ সালে অবৈধ ঘোষণা করেছিল চিনের সুপ্রিম কোর্ট, অতিরিক্ত চাপ ও সামাজিক জীবনে বিরূপ প্রভাবের কারণ দেখিয়ে। তবুও বাস্তবে বহু সংস্থায় এই রীতি এখনও আংশিকভাবে বজায় রয়েছে বলেই বিভিন্ন প্রতিবেদন দাবি করে।
ভারতের অর্থনীতি যে এখনও চিনের তুলনায় বহুগুণ ছোট তা স্বীকার করেও মূর্তি মনে করেন, সঠিক পরিকল্পনা, দৃঢ় সংকল্প এবং কঠোর কর্মনীতির সাহায্যে ভারত আগামী দশকে শক্তিশালী অবস্থানে উঠতে পারে। তাঁর দাবি, শুধু তরুণদের নয় সরকার, আমলা, শিল্পপ্রতিষ্ঠান এবং রাজনৈতিক নেতৃত্ব সবাইকে সমান পরিশ্রমী হতে হবে, তবেই সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব।
তবে দীর্ঘ কর্মঘণ্টা নিয়ে দেশে আবারও নতুন করে তর্ক-বিতর্ক ছড়িয়ে পড়েছে। একাংশ মনে করছে অতিরিক্ত কাজের চাপ কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্য ধ্বংস করবে এবং পরিবার-সমাজ সবক্ষেত্রে তৈরি করবে ভারসাম্যহীনতা। অন্যদিকে আরেক অংশ বিশ্বাস করে, গোটা বিশ্বের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে উৎপাদনশীলতা বাড়ানো ছাড়া বিকল্প নেই।
নারায়ণ মূর্তির বক্তব্য নতুনভাবে পুরনো প্রশ্নকে সামনে এনেছে ভারত কি উন্নতির জন্য কঠোর পরিশ্রমে প্রস্তুত, নাকি কাজ-জীবনের সামঞ্জস্যই হবে ভবিষ্যতের প্রধান মূল্যবোধ?
