
নয়া সরকারি নির্দেশে সব স্মার্টফোনে প্রি-ইনস্টলড ‘সঞ্চার সাথী’ অ্যাপ বাধ্যতামূলক হওয়ায় দেশজুড়ে উদ্বেগ ছড়িয়েছে। বিরোধী দলগুলি থেকে সাধারণ নাগরিক অনেকেই আশঙ্কা করছেন, এটি ভবিষ্যতে নতুন ধরনের নজরদারি ব্যবস্থায় পরিণত হতে পারে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সংসদের ভিতরে-বাইরে এই সিদ্ধান্তের কড়া বিরোধিতা করতে পারেন বলে সূত্রের খবর।
সরকার জানিয়েছে, চুরি যাওয়া বা নকল স্মার্টফোন শনাক্ত করতে অ্যাপটি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কিন্তু সমালোচকদের মতে, সমস্যা এর উদ্দেশ্য নয় সমস্যা এর পদ্ধতি। কারণ অ্যাপটি ফোন থেকে ডিলিট বা ডিসেবল করার সুযোগ থাকবে না। এমনকি সফটওয়্যার আপডেটের মাধ্যমে পুরনো ফোনেও এটি ঢুকিয়ে দেওয়া হবে। প্রযুক্তিবিদদের একাংশ মনে করছেন, কোনও অ্যাপকে অপারেটিং সিস্টেমের গভীরে এতটা প্রবেশাধিকার দিলে তা ভবিষ্যতে আরও বিস্তৃত মনিটরিং টুলে বদলে যাওয়ার ঝুঁকি থেকেই যায়।
সামাজিক মাধ্যমে বহু মানুষ প্রশ্ন তুলছেন অ্যাপটি যদি ‘ফোন ফাইন্ডার’ হিসেবেই থাকে, তাহলে ক্যামেরা অ্যাক্সেস, কল লগ, মেসেজ মনিটরিং, লোকেশন ট্র্যাকিং এই সংবেদনশীল অনুমতিগুলোর প্রয়োজন কেন? লেখক রমেশ শ্রীবৎস তীব্র কটাক্ষ করে লিখেছেন, “নিরাপত্তার নামে এটা সরাসরি অনুপ্রবেশ। বাড়ির নিরাপত্তা চাই মানলাম, কিন্তু ঘরের ভেতর পুলিশ বসিয়ে দেওয়ার মতো নয়।”
বিরোধী রাজনৈতিক মহলেও অসন্তোষ তীব্র। কংগ্রেস সাংসদ কার্তি চিদাম্বরমের মন্তব্য, “এটা পেগাসাস প্লাস প্লাস।” শিবসেনা সাংসদ প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদীর কথায়, “এটা বিগ বস স্টাইল নজরদারি।” সিপিএমের জন ব্রিট্টাস আবার কটাক্ষ করেছেন “এবার কি ১৪০ কোটি মানুষের পায়ে মনিটর লাগানো হবে?”
তবে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, পেগাসাস ও সঞ্চার সাথীর প্রযুক্তিগত ভিত্তি আলাদা একটি স্পাইওয়্যার, অন্যটি ফোন শনাক্তকরণ অ্যাপ। তবুও মূল উদ্বেগ হচ্ছে স্বচ্ছতার অভাব। কোনও জনমত বা খসড়া প্রকাশ না করেই সরাসরি সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে কেন্দ্র।
ফলে প্রশ্ন ঘুরে ফিরে একটাই সুরক্ষার নামে কি নাগরিকের ব্যক্তিগত পরিসরে নতুনভাবে ঢুকে পড়ছে রাষ্ট্র?
