
বছর ঘুরলেই রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগেই প্রশাসনিক প্রস্তুতি, রাজনৈতিক গতি-প্রকৃতি এবং কেন্দ্র–রাজ্য দ্বন্দ্বে উত্তপ্ত বাংলার আবহে নবান্নের বৈঠক থেকে বিগত সাড়ে ১৪ বছরের কাজের বিস্তারিত রিপোর্ট কার্ড প্রকাশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, “ক্ষমতায় আসার আগে মানুষকে আমরা যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, সেই প্রতিশ্রুতির কোনগুলো রূপায়িত হয়েছে তা জানানো আমাদের দায়িত্ব।” সেই কারণেই সরকারের ‘উন্নয়নের পাঁচালি’ তুলে ধরা হয়েছে একটি ভিডিও ও পরিসংখ্যানসহ।
২০১১ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে দেড় দশকের মতো সময়ে রাজ্যে ৯৪টি সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প চালু করেছে সরকার যার মধ্যে রয়েছে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, কন্যাশ্রী, কৃষকবন্ধু, ছাত্রছাত্রীদের ক্রেডিট কার্ড, স্বাস্থ্যসাথী সহ একাধিক প্রকল্প। বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, গ্রামীণ পরিকাঠামো থেকে শুরু করে প্রতিটি দপ্তরেই ধারাবাহিক উন্নয়ন হয়েছে।
তিনি জানান, গ্রামীণ সড়ক, গ্রামীণ আবাস যোজনা এবং ১০০ দিনের কাজে পরপর চার বছর বাংলাই শীর্ষস্থানে ছিল। এই কর্মক্ষমতার জেরেই কেন্দ্র ‘অন্যায়ভাবে’ বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা আটকে রেখেছে বলে অভিযোগ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর দাবি, জিএসটি বাবদ রাজ্যের প্রাপ্য ছাড়াও প্রায় ২ লক্ষ কোটি টাকা কেন্দ্র দিচ্ছে না। তবুও রাজ্যের নিজস্ব উদ্যোগে কর্মশ্রী, বাংলার বাড়ির মতো প্রকল্প চালু রাখা হয়েছে।
কেন্দ্রকে উদ্দেশ করে মমতা বলেন, “টাকা দেবেন কবে? নির্বাচন দরজায়। ফেব্রুয়ারিতে টাকা দিয়ে আবার নিয়ে নিলে কাজ কীভাবে চলবে? চালাকি আমরা বুঝি।” তাঁর এই মন্তব্যে রাজনৈতিক মহলে নতুন চর্চা শুরু হয়েছে নির্বাচনের আগে কেন্দ্র-রাজ্যের টানাপোড়েন যে আরও তীব্র হবে তা স্পষ্ট।
বিরোধীরা বহুদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছে, রাজ্যে নাকি উন্নয়ন হয়নি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই অভিযোগকেই প্রত্যাখ্যান করে পরোক্ষে জবাব দেন এই রিপোর্ট কার্ডের মাধ্যমে। পরিসংখ্যান প্রকাশের পাশাপাশি বৈঠকে দেখানো ভিডিওতে ১৪ বছরের ‘উন্নয়নের পাঁচালি’ তুলে ধরা হয়। সেই পাঁচালির ওপর সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী ইমন চক্রবর্তী। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য গ্রামের সেই হারিয়ে যাওয়া পাঁচালি পাঠের ঐতিহ্য ধরে রাখতেই এই ভাবনা।
নবান্নের সভাঘরে এদিন উপস্থিত ছিলেন মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, সব দফতরের মন্ত্রী ও সচিব, বিভিন্ন জেলার জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপাররা। আসন্ন ভোটের আগে সরকারের এই উন্নয়ন-প্রদর্শনমূলক রিপোর্ট কার্ড নিঃসন্দেহে রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে পর্যবেক্ষকদের একাংশ।
