পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা আজ আর গণতন্ত্রের পবিত্র মন্দির নয়, বরং তা পরিণত হয়েছে ক্ষমতার অহংকারের মঞ্চে। যার নেতৃত্বে এই কলুষিত রূপ, তিনি আর কেউ নন—মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একদা সাধারণ মানুষের ত্রাণকর্ত্রী, আজ সেই নেত্রীই বিধানসভাকে ব্যক্তিগত প্রতিহিংসার আঙিনা বানিয়ে ফেলেছেন।
সদ্য ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোই প্রমাণ করে, কিভাবে বিধানসভাকে তাঁর ব্যক্তিগত শক্তিপ্রদর্শনের ক্ষেত্র বানানো হয়েছে। বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করা, শাসক দলের নেতাদের দুর্নীতির অভিযোগ ধামাচাপা দেওয়া, এমনকি নিজের দলের ভিতরকার বিদ্রোহ দমনেও তিনি লাগাতার অপব্যবহার করেছেন প্রশাসনিক শক্তি।
বিরোধী দলনেতাদের কথার জবাবে বিষোদ্গার করা, গায়ে হাত তোলা, এমনকি চেয়ার ছোঁড়ার মতো অশোভন আচরণও আজ বিধানসভার অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অভিযোগ উঠছে, যে গণতন্ত্রের জন্য তিনি একদিন লড়াই করেছিলেন, আজ সেই গণতন্ত্রকেই দমন করতে বদ্ধপরিকর।
বিধানসভায় শৃঙ্খলা ভঙ্গের নতুন নতুন নজির তৈরি হচ্ছে, অথচ মুখ্যমন্ত্রী এ বিষয়ে নির্বিকার। বিরোধী দলনেতাদের বিরুদ্ধে ক্রমাগত ব্যবহৃত হচ্ছে পুলিশি হস্তক্ষেপ, কণ্ঠরোধের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে প্রশাসনিক জুলুম। অথচ, নিজের দলের দুর্নীতি নিয়ে তিনি নিশ্চুপ। শিক্ষক নিয়োগ কেলেঙ্কারি, চিটফান্ড দুর্নীতি কিংবা সাম্প্রতিক স্বাস্থ্যমহলের বেহাল অবস্থা—সব কিছুর দায় যখন শাসকের দিকে, তখন মুখ্যমন্ত্রী কেবল নির্লিপ্ত দর্শকের ভূমিকায়।
এই পরিপ্রেক্ষিতে প্রশ্ন ওঠে—পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা কি আদৌ গণতান্ত্রিক নীতি মেনে চলছে? নাকি এটি ক্রমশ পরিণত হচ্ছে একনায়কের নির্দেশ পালনের মঞ্চে? যে বিধানসভা এক সময় মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করত, আজ তা কীভাবে শুধুমাত্র ক্ষমতার মোহে কলঙ্কিত হয়ে পড়ল?
রাজ্যের সাধারণ মানুষ এই ঘটনাগুলোর সাক্ষী, এবং আগামী নির্বাচনে তাঁদের রায়ই হবে এই অনাচারের প্রকৃত জবাব। ততদিন পর্যন্ত প্রশ্ন থেকেই যায়—এই কলুষিত বিধানসভা কি আর কখনো তার গৌরব ফিরে পাবে?