শরৎ এখনো ঢের দেরি, রুটির টানে বসন্তেই উমার লন্ডন পাড়ি
সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়
বাপের বাড়ি আসতে উমার এখনও ঢের দেরি। এখন কৈলাসে স্বামী সন্তান নিয়ে সুখে সংসার করছেন উমা।
কিন্তু রুটি-রুজির টানে এই ভরা বসন্তে উমার মৃন্ময়ী মূর্তি তৈরীর কাজে দিনরাত এক করছেন কুমারটুলির মৃৎশিল্পীরা। সাত সমুদ্র তেরো নদীর পাড় থেকে উমার ডাক এসেছে। চিরন্তনী সাবেকি মা ও মাকে মৃন্ময়ী রূপে পাঠাতে হবে সুদূর লন্ডনে। তাই এই বসন্তের দিনেও প্রবাসের শারদীয়ার দিনগুলো রঙিন করে তুলতে নাওয়া খাওয়া ভুলে কর্মচঞ্চল কলকাতার কুমারটুলি। শুধু লন্ডন শহরেই নয়, আমেরিকা, ফ্রান্স, জাপান নেদারল্যান্ডস সহ পৃথিবীর বহু দেশ থেকেই বায়না এসেছে উমার। সাততাড়াতাড়ি জাহাজে চড়ে উমা সাত সমুদ্র তেরো নদী পাড়ি দেবে। তাই সাজিয়ে গুজিয়ে তোমাকে প্রবাসের বাপের বাড়ি পাঠানোর তোড়জোর এখন কুমারটুলির মৃৎশিল্পীদের। জাহাজে যেতে অনেক সময় লাগবে তাই আগে থাকতেই ব্যস্ত মাটির কারিগররা। বছরভর সন্তানকে দুধে ভাতে রাখার আশা নিয়ে এই প্রবাসী বাইনার জন্য মুখিয়ে থাকেন তারা। তাই বাঙালি যখন শারদোৎসব নিয়ে এখনো হাতে সময় রেখে প্রস্তুত হতে চায় ঠিক সেই সময় হাফ ছাড়ার যো নেই কুমারটুলির।
শহর কলকাতা থেকে শুরু করে বাংলার বুকে আজ সেই অর্থে সাবেকিয়ানা একপ্রকার হারাতে বসেছে। কালের বিবর্তনে প্রায় প্রতি মন্ডপেই এখন থিমের ছোঁয়া। কিন্তু বিদেশের মাটিতে কোথাও যেন সেই সাবেকিয়ানাতেই উৎসবের প্রাণ। একদিকে কাঁচামালের ব্যাপক দাম বৃদ্ধি অন্যদিকে পুজো উদ্যোক্তাদের রুচি পরিবর্তন কিছুটা হলেও মন খারাপ করে দেয় কুমারটুলির। বাপ-ঠাকুরদার হাতে-কলমে তৈরি করা মা দুর্গার অবয়ব আর তাকে বাঁচিয়ে রাখতে রীতিমতো নাভিশ্বাস উঠছে এখনকার মৃৎশিল্পীদের। যেভাবে প্রতিনিয়ত উৎপাদন খরচ ও শ্রমিকের মজুরি বাড়ছে সেই অনুযায়ী তাদের সৃষ্টির দাম পাচ্ছেন না শিল্পীরা বলে অনুযোগ। তবুও সৃষ্টির নেশায় এবং বংশ পরম্পরায় ঐতিহ্য বজায় রাখতে সমস্ত প্রতিকূলতাকে পিছনে ফেলে দিয়েই এই ভরা বসন্তে ই তোমাকে প্রবাসে চিরন্তনী রূপে পাঠাতে বদ্ধপরিকর কুমারটুলি। প্রবাসের বায়না মিটলে শুধুই সময়ের অপেক্ষা। আগামী শরতে বাপের বাড়ি এসে মা উমা যেন তাঁদের দিকে একটু ফিরে তাকান সেই আশাতেই এখন বুক বাঁধছে কুমারটুলি।
বাইট :: প্রশান্ত পাল, কুমারটুলির মৃৎশিল্পী
(ছবিও দেওয়া আছে)