গোল করেও সমালোচনার মুখে সুনীল ছেত্রী, জাতীয় দলে ফিরে তার পারফরম্যান্স নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। সমর্থকদের আশা পূরণ হলেও, কিছু বিশ্লেষক এখনও প্রশ্ন তুলছেন তার সাম্প্রতিক ফর্ম নিয়ে। তাঁর ফেরার বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক আরও তীব্র হয়েছে, বিশেষ করে ভাইচুং ভুটিয়ার মন্তব্যের পর। ভুটিয়া স্পষ্টভাবেই সুনীলের প্রত্যাবর্তনকে সহজভাবে নেননি, যা ফুটবল মহলে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
আগামীকাল শিলংয়ে এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বে বাংলাদেশের বিপক্ষে ভারতের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচটি সুনীলের জন্য কেবল আরেকটি প্রতিযোগিতা নয়, বরং নিজের সামর্থ্য প্রমাণের শেষ সুযোগ। এই ম্যাচে জয় না পেলে ২০২৭ সালের এশিয়ান কাপে খেলার ভারতের আশা প্রায় শেষ হয়ে যাবে।
ভারতের সামনে আসন্ন ম্যাচটি শুধু আরেকটি খেলা নয়, বরং মূল পর্বে জায়গা করে নেওয়ার লড়াই। কারণ, চার দলের এই গ্রুপ থেকে মাত্র একটি দলই পরবর্তী রাউন্ডে খেলতে পারবে, যা ভারতের চ্যালেঞ্জ আরও কঠিন করে তুলেছে। প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের পাশাপাশি রয়েছে সিঙ্গাপুর ও হংকং, যারা সমানভাবে মূল পর্বের টিকিট পেতে মরিয়া।
এই পরিস্থিতিতে ভারতের জন্য বাংলাদেশের বিপক্ষে জয় ছাড়া অন্য কিছু ভাবার সুযোগ নেই। হারের ফলে কেবল টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নয়, দলের পারফরম্যান্স নিয়েও তীব্র সমালোচনা হবে। বিশেষ করে দলের অভিজ্ঞ খেলোয়াড় সুনীলের ওপর চাপ থাকবে সবচেয়ে বেশি। তার পারফরম্যান্স নিয়ে ইতোমধ্যেই আলোচনা চলছে, আর এই ম্যাচের ফলাফলের ওপর তা আরও নির্ভর করবে।
অন্যদিকে, প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোও সহজ প্রতিপক্ষ নয়। সিঙ্গাপুর ও হংকং নিজেদের সেরাটা দিতে প্রস্তুত, আর বাংলাদেশও লড়াইয়ে নামবে জয়ের আত্মবিশ্বাস নিয়ে। ভারতের জন্য এটি শুধু একটি ম্যাচ নয়, বরং টিকে থাকার লড়াই। এমন পরিস্থিতিতে দলের প্রত্যেক খেলোয়াড়কে নিজেদের সেরাটা দিতে হবে, কারণ একটি ভুলই স্বপ্ন ভেঙে দিতে পারে।
এ কারণেই তিনি আপাতত নিজেকে মিডিয়া থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছেন এবং অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশনের প্রেস টিমের সঙ্গেও কথা বলছেন না।
ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে—৫৯ ধাপের ব্যবধান। কিন্তু ফুটবলের লড়াই শুধুমাত্র সংখ্যার হিসাব নয়, বরং মাঠের পারফরম্যান্সই শেষ কথা বলে। দুই দলের অতীত সাক্ষাতে ভারত ১৪ বার জয়ী হলেও, বাংলাদেশও ৪টি ম্যাচে জয়ের স্বাদ পেয়েছে। তাই পরিসংখ্যানের বিচারে ভারত এগিয়ে থাকলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতার মঞ্চে কিছুই নির্ধারিত নয়।
ভারতীয় দলের অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার সন্দেশ ঝিঙ্গানের মতে, এই ম্যাচের ফলাফল নির্ধারণে পরিসংখ্যানের চেয়ে আবেগ, মনোবল ও প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাত্রাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ হবে। ফুটবল মাঠে কোনো দল আগেভাগে জয় নিশ্চিত করতে পারে না—ফল নির্ধারিত হয় ৯০ মিনিটের খেলাতেই। তাই বাংলাদেশকে সহজ প্রতিপক্ষ ভেবে নেওয়ার সুযোগ নেই, বরং সতর্কতা বজায় রেখেই খেলতে হবে। প্রতিটি মুহূর্তেই সতর্ক থাকতে হবে, কারণ খেলার মোড় যে কোনো সময় ঘুরে যেতে পারে।
বাংলাদেশ দলের জন্য বাড়তি উচ্ছ্বাসের কারণ হয়েছেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের তারকা মিডফিল্ডার হামজা চৌধুরী। লেস্টার সিটির এই ফুটবলারের অন্তর্ভুক্তি বাংলাদেশের স্বপ্নে নতুন রং যোগ করেছে। তার উপস্থিতি দলের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তুলেছে এবং প্রতিপক্ষের জন্য বাড়তি চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে।
ফুটবলপ্রেমীরা মনে করছেন, শিলংয়ের ম্যাচের অন্যতম আকর্ষণ হতে চলেছে দুই তারকা—সুনীল ছেত্রী ও হামজা চৌধুরীর মুখোমুখি লড়াই। এই দুই মিডফিল্ডারের পারফরম্যান্স ম্যাচের গতিপথ অনেকটাই নির্ধারণ করে দিতে পারে।
ফুটবলে যে কোনো কিছুই সম্ভব, তাই ম্যাচ শুরুর আগে নির্দিষ্ট কোনো দলকে ফেভারিট হিসেবে ধরা ঠিক হবে না। দুই দলই নিজেদের সেরা খেলাটা উপহার দিতে চাইবে, আর এই উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে ভক্তরাও উপভোগ করবেন দারুণ এক লড়াই।
Leave a comment
Leave a comment