আগামী ৩-৪ এপ্রিল থাইল্যান্ডে হতে চলেছে বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলন আর এতে অংশ নিতে সে দেশে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এই সম্মেলনের ফাঁকেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনুসের বৈঠক আয়োজনের লক্ষ্যে নয়াদিল্লির সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল ঢাকা।কিন্তু এখনও পর্যন্ত এমন কোনও বৈঠকের কথা এখনও পর্যন্ত নিশ্চিত করে নি বিদেশমন্ত্রক।তবে শুক্রবার বিদেশ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পায়েতংতান শিনাওয়াত্রার আমন্ত্রণে ব্যাঙ্ককে ৬ষ্ঠ BIMSTEC শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেবেন এবং তাঁর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন।এমইএ-র বিবৃতিতে বলা হয়েছে, থাইল্যান্ড সফর শেষে মোদী শ্রীলঙ্কা সফর করবেন।এর আগে ২০১৯ সালে আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনে যোগদানের পর এটি হবে প্রধানমন্ত্রীর দ্বিতীয় থাইল্যান্ড সফর।
বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের সময় বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনুসের সঙ্গে মোদীর বৈঠকের বিষয়ে বিবৃতিতে কিছু উল্লেখ করা হয়নি। বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তনের পর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উত্তরণে ঢাকা এই বৈঠক চেয়েছিল।২০১৮ সালে নেপালের কাঠমান্ডুতে ৪র্থ বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের পর এবারই প্রথম সরাসরি উপস্থিতির মাধ্যমে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। থাইল্যান্ড বর্তমানে এই আঞ্চলিক জোটের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছে। ভারতের বিদেশমন্ত্রক জানিয়েছে যে এই সম্মেলনে উপস্থিত নেতৃত্ব BIMSTEC কাঠামোয় সহযোগিতা জোরদারে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সক্ষমতা বৃদ্ধির পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করবেন। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “ভারত BIMSTEC-এ আঞ্চলিক সহযোগিতা ও অংশীদারিত্ব শক্তিশালী করতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে।”
বে অফ বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি-সেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কোঅপারেশন (বিমসটেক) তার সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে সাতটি অগ্রাধিকারমূলক ক্ষেত্রে সহযোগিতার চেষ্টা করে। তার মধ্যে আছে নিরাপত্তা,সন্ত্রাস দমন ও আন্তর্জাতিক অপরাধ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও জ্বালানি, বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন, পরিবহন সংযোগ, কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং জনগণের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রতিনিধিত্ব করা বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, মায়ানমার, নেপাল, শ্রীলঙ্কা এবং থাইল্যান্ড নিয়েই হয় BIMSTEC শীর্ষ সম্মেলন। থাইল্যান্ডের নেতৃত্বে এই ফোরাম ২০৩০ সালের মধ্যে ‘প্রো বিমস্টেক’ বা ‘সমৃদ্ধ, স্থিতিশীল এবং উন্মুক্ত’ অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করছে। বিমস্টেক অঞ্চলে ১.৭ বিলিয়নেরও বেশি মানুষ বাস করে এবং এর মোট জিডিপি ৪.৭ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। বিমস্টেকের প্রতিটি সদস্যদেশের মধ্যে সুসম্পর্ক না থাকলে উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলা অসম্ভব।
এমইএর তথ্য অনুসারে ৩ এপ্রিল মোদী থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী শিনাওয়াত্রার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন, যেখানে দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন খাতে সহযোগিতা পর্যালোচনা এবং ভবিষ্যৎ সম্পর্কের রূপরেখা নিয়ে আলোচনা হবে। কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী ৪-৬ এপ্রিল শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট অনুরা কুমারা দিসানায়াকার আমন্ত্রণে কলম্বো সফর করবেন। নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর এটাই হবে মোদীর প্রথম শ্রীলঙ্কা সফর। শ্রীলঙ্কার নেতা ক্ষমতায় এসেই প্রথম বিদেশ সফরে ভারত গিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী শ্রীলঙ্কার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক পর্যালোচনা করবেন।এছাড়া, ভারতের আর্থিক সহায়তায় উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন করতে তিনি অনুরাধাপুরা যাবেন।
থাইল্যান্ডে বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হওয়ার সূচি না হলেও অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে মোদীর কিছু সময়ের জন্য সৌজন্য সাক্ষাৎ হবে কি না, সে বিষয়ে সরকারি বিবৃতিতে কিছু বলা হয়নি। তবে দুই নেতা একই আসরে থাকায় সৌজন্য বিনিময়ের পাশাপাশি আলাপচারিতা হলেও তা হবে অনানুষ্ঠানিক। বাংলাদেশে রাজনৈতিক পালাবদলের পর সেপ্টেম্বরে রাষ্ট্রসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের বার্ষিক সম্মেলনে দুই নেতার মধ্যে মুখোমুখি দেখা হয়নি।
Leave a comment
Leave a comment
