কেরালা হাইকোর্ট সম্প্রতি এক মামলায় এমন একটি মূল্যবান মন্তব্য করেছে, যা সমাজে মহিলাদের প্রতি কট্টর পিতৃতান্ত্রিক মানসিকতা ও পদ্ধতির বিরুদ্ধে এক শক্তিশালী প্রতিবাদ। আদালত বলেছে, “শুধুমাত্র পোশাক দেখে কোনও মহিলার চরিত্র বা ভদ্রতা বিচার করা, কোনও সভ্য সমাজে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।”
মামলাটি ছিল এক মহিলার সন্তানের কাস্টডি নিয়ে, যেখানে পরিবারের আদালত প্রাথমিকভাবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে, ওই মহিলা তাঁর সন্তানদের খেয়াল রাখার যোগ্য নন। এর পেছনে কারণ হিসেবে তাঁর খোলামেলা পোশাক পরা, পুরুষ বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো এবং ডেটিং অ্যাপে ছবি পোস্ট করার অভিযোগ তোলা হয়েছিল। এছাড়া, তাঁর প্রাক্তন স্বামী দাবি করেছিলেন যে, মহিলাটি একজন হ্যাকারকে নিয়োগ করেছিলেন।
এই রায়কে খারিজ করে, কেরালা হাইকোর্ট জানায় যে, একজন মহিলার পোশাক বা জীবনযাপনকে ভিত্তি করে তাঁর চরিত্র বিচার করা দুর্ভাগ্যজনক। বিচারপতি দেবান রামচন্দ্রণ ও বিচারপতি এম বি স্নেহলতার বেঞ্চ বলেন, “আজও সমাজের অনেকাংশে কট্টর পিতৃতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত, এবং ছোট বয়স থেকেই মেয়েদের উপর ‘অলিখিত পোশাক নির্দেশিকা’ চাপানো হয়।”
কোর্ট আরো বলেন, একজন মহিলার পোশাক, তাঁর ব্যক্তিগত পছন্দ ও স্বাতন্ত্র্যের প্রতীক এবং এটি তার জীবনযাপনের স্বাধীনতা। বিশেষত, মহিলার ডিভোর্সের পর তাঁর জীবনে পরিবর্তন আসতে পারে, এবং এটি কখনই তার চরিত্র বা মা হিসেবে যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার ভিত্তি হতে পারে না।
এছাড়া, আদালত জানায় যে, প্রাক্তন স্বামীর এহেন আচরণও অত্যন্ত নিন্দনীয়। আদালত স্পষ্টভাবে জানিয়েছে যে, একজন মহিলার বিবাহিত হওয়া বা ডিভোর্সের পর কিভাবে তার জীবনযাপন করা উচিত, তা তাঁর নিজস্ব অধিকার এবং কাউকে তা নিয়ে মন্তব্য করার অধিকার নেই।
এই রায়ে কেরালা হাইকোর্ট এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছে, যেখানে ব্যক্তিগত জীবনযাপন ও স্বাধীনতার প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং পিতৃতান্ত্রিক মানসিকতার বিরুদ্ধে এক শক্তিশালী অবস্থান গ্রহণ করা হয়েছে।