“অভিষেক কে?”
ব্রাত্য-কুনাল-কল্যাণ ত্রিমুখী দ্বন্দ্বে জেরবার রাজ্য রাজনীতি! প্রশ্ন উঠল, “অভিষেক কে?”
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তিনি। শুধু তাই নয় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্নেহধন্য ভাইপো। যদিও মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো হিসেবে বিরোধীদের থেকে নানান কটুক্তি শুনতে হয় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তবে হাজারো কটুক্তি হাজারো অপমান সহ্য করেও মেরুদন্ড সোজা রেখে নিজের বাক্যবাণে মানুষের মন জিতে নিতে পারেন তিনি। কিন্তু এবার যদি হঠাৎ করে কেউ প্রশ্ন তোলেন অভিষেক কে? “প্রশ্ন তোলেন” নয়, প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি হলেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়।
সম্প্রতি একটি টেলিভিশন চ্যানেলে কথা বলতে গিয়ে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বিভিন্ন কথার মাঝে কথা বলতে গিয়ে হঠাৎ করে একটি প্রশ্ন করে বসেন। সেটি হল, “অভিষেক কে?” রীতিমতো প্রশ্নটি হুংকার দিয়ে করেছিলেন তিনি। কিন্তু অদ্ভুতভাবে ওই একবারই সংশ্লিষ্ট টেলিভিশন চ্যানেলে এই সাক্ষাৎকার দেখানো হয়। তারপর থেকে যতবারই সেই ভিডিও ঘুরেফিরে এসেছে, সেখানে কোনভাবেই “অভিষেক কে?” কথাটা শুনতে পাওয়া যায়নি কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ থেকে। কারণ, ভিডিও থেকে কল্যাণের বলা ঐ মন্তব্যকে বাদ দেওয়া হয়েছে কলাকুশলীদের পক্ষ থেকে।
তবে অতীতে যে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এই ধরনের কোন মন্তব্য করেনি তা কিন্তু নয়। কিন্তু হঠাৎ করে তার এই হুংকার মিশ্রিত প্রশ্নটিকে কেন ভিডিও থেকে বাদ দিয়ে দেওয়া হল, সেই নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। প্রশ্ন উঠছে, তবে কি কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিটি টেলিভিশন চ্যানেলে ফোন করে কাতর অনুনয় বিনয় করে বলেছেন, যাতে কোনভাবে ভিডিও ক্লিপের ওই বিশেষ অংশটিকে সম্প্রচার করা না হয়? তা যদি তিনি বলেই থাকেন, তাতে অবশ্য অবাক হওয়ার কিছু থাকে না। তবে কি এটাই বীরপুরুষদের আসল চেহারা? সুবিধার সুযোগ বুঝে মনের কথা এরা যেমন বলতেও পারে, ঠিক তেমনি সুযোগ সন্ধানীর মত হাতে পায়ে ধরে হলেও, সেই কথা সরিয়ে দেওয়ার জন্য অনুনয় বিনয় করতেও পারেন।
রাজ্যের প্রতিটি বিরোধী দল একটা কথা মানতে বাধ্য, সমগ্র তৃণমূল কংগ্রেস দলটার মধ্যে যদি এমন কোন নেতা থেকে থাকে যিনি ভদ্র,বিনয়ী এবং নম্র তাহলে তিনি আর কেউ নন, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং। স্বাস্থ্য শিবির উপলক্ষে ডায়মন্ড হারবারে গিয়েছিলেন অভিষেক। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় এই প্রসঙ্গটিও উঠেছিল সেদিন। প্রতিবাদ করার অধিকার সবার আছে, কোথায় কি গান গাইবে না গাইবে সেই বিষয়ে খুব একটা মাথা কামানোর প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন না বলে পরিষ্কার জানিয়ে দেন অভিষেক। এ প্রসঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কেউই কিছু বলেননি। তাই এসব নিয়ে মাথা ঘামানোর কোন মানে হয় না। আসলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যে কথাই বলুন না কেন তার অর্থ ভীষণ সিরিয়াস। অর্থাৎ দিনরাত দলের জন্য মুখপাত্র হিসেবে বিরোধীদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে যাচ্ছেন যে মানুষটি, তিনি আদৌ দলের কেউ কিনা সেই নিয়ে রীতিমতো প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন অভিষেক। মুখপাত্রের কথা যদি দলের কথা না হয় তাহলে মুখপাত্র কার মুখপাত্র হিসেবে কথা বলেন? মুখপাত্ররা প্রতিদিনই টেলিভিশনে নিজেদের উজ্জ্বল উপস্থিতি রাখেন। একের পর এক বুম লাইট ক্যামেরা সব তাদের দিকেই তাক করা থাকে। ঠিক সেই জায়গাতেই হয়তো আঘাত দিয়ে ফেলেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই জেনে শুনে না হলে অজ্ঞাতসারে। অভিষেকের কথা মত দল চললে শ্রীরামপুর থেকে টিকিট পেতেন না কল্যাণ।
আর সেই রাগটাই পুষে রেখেছিলেন কল্যাণ। এই ঘটনার মধ্য দিয়ে পুরো বিষয়টি সামনে চলে আসে। অন্যদিকে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় অবকাশ পেলে নিজের রাগ ঝেড়ে ফেলার।
উল্লেখ্য, আরজি কর পর্বে সরকার তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমালোচনা করা শিল্পীদের বয়কটের ডাক দিয়েছিলেন তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষ। বৃহস্পতিবার সেই প্রসঙ্গে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন, কুণালের বক্তব্য ‘দলের অবস্থান’ নয়। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দেখা গেল, কুণালের পাশে দাঁড়ালেন প্রবীণ তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘কৌশলী’ মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। যার মর্মার্থ— মমতার মতই তাঁর পথ।
আরজি কর আন্দোলন পর্বে সে ভাবে ‘সক্রিয়’ ছিলেন না অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৪ অগস্ট ‘মেয়েদের রাত দখল’ অভিযানের পরে রাতে আরজি করে ভাঙচুরের ঘটনায় তিনি ‘সক্রিয়’ হয়েছিলেন। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের কর্মসূচিতে অভিষেক প্রকাশ্যেই ‘রাত দখল’ অভিযানকে শ্রদ্ধা জানান। অভিষেক বাইরে ছিলেন বলে কুণাল শুক্রবার সেটাই মনে করিয়ে দিতে চেয়েছেন।
কুণালের বয়কটের ডাককে সমর্থন জানিয়ে কল্যাণ বলেন, তাঁর সংসদীয় এলাকায় দলের লোকেরা যে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত, সেখানে এমন কোনও শিল্পীকে তিনি ঢুকতে দেবেন না, যাঁরা আরজি কর পর্বে তৃণমূল তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতার সমালোচনা করেছেন। কল্যাণের কথায়, ‘‘আমাদের সমস্ত আবেগ মমতাদিকে ঘিরে। তাঁকে যাঁরা অসম্মান করেছেন, সেই শিল্পীদের কেন ডাকতে যাব? আমার এলাকায় তো আমি ঢুকতে দেব না!’’ অন্যদিকে, শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বলেছেন, ‘‘দেখাই যাচ্ছে দলে দু’রকমের মত রয়েছে। আমাদের দল রেজিমেন্টেড নয়। অনেক খোলামেলা। তাই কেউ কারও কথা বলতেই পারেন।” এবার দলের হয়ে কথা কে বলবেন সেটাই দেখার।