তৃনমূলের অন্দরে আমে দুধে তো মিশে গেল! তবে আঁটির অবস্থান হবে কোথায়?
রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস এবং সরকার কোন পথে এগিয়ে যাবে? সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, কাদের কথায় বা নির্দেশনায় এগিয়ে যাবে দল? সেই নিয়েই এবার বৈঠক হয়ে গেল রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সুব্রত বক্সির মধ্যে। হাতে মাত্র আর একটা বছর তারপরেই রাজ্য জুড়ে হতে চলেছে বিধানসভা নির্বাচন। তাই এখন থেকেই প্রস্তুতি তুঙ্গে শাসকদলের অন্দরে। কারণ সংগঠন ধরে রাখতে হবে, রাজ্যের কুরশি হস্তান্তর হতে দিলে চলবে না। তাই দলীয় কোন কাজে খামতি রাখা চলবে না।
ইতিমধ্যেই তৃণমূল কংগ্রেসের সরকারের তরফ থেকে রাজ্য জুড়ে বহু সংখ্যক জনমুখী প্রকল্প চালু করা হয়েছে। সেই সমস্ত প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন শহর থেকে গ্রামে গঞ্জের বহু মানুষ। তার মধ্যে বেশিরভাগই অনুদানমূলক। সে যাই হোক না কেন, শাসক দলের প্রধান লক্ষ্য হলো ভোটব্যাঙ্ক। তৃণমূল কংগ্রেসের সরকার একাধিক জনমুখী সামাজিক প্রকল্প বাংলায় চালু করেছে। আর ঠিক সেই কারণেই ভোট বৈতরণী পার করতে খুব একটা সমস্যায় পড়তে হয়নি রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসকে। তবে এবার নতুন বছরে নতুন সিদ্ধান্ত নিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সির সঙ্গে বৈঠকে বসে সে কথা জানিয়ে দিয়েছেন মমতা। শুধু তাই নয়, রাজনৈতিক পথও চূড়ান্ত করে ফেলেছেন।
তাই আর দেরি না করে ২০২৫ শুরু হতেই সাংগঠনিক এবং প্রশাসনিক বৈঠক সেরে নিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই বৈঠকে ছিলেন অভিষেক এবং বক্সিদা। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের ভিত্তিতে যেকোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করার ক্ষেত্রে একটু অপেক্ষা করতে চেয়েছিলেন অভিষেক। সে অপেক্ষার অবসান ঘটেছে। তাইতো রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন তাঁরই ভাইপো তথা ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
তবে, সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা মেনে সমন্বয় তৈরীর ভার দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সির উপরেই দিয়ে দিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নির্বাচনের আগে যাতে দলীয় সংগঠন ঠিক থাকে এবং কোনোভাবেই জাতীয় দলের ভাবমূর্তি নষ্ট না হয় সেদিকেই বেশি করে নজর দেওয়া হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
তবে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হল এটাই, একটা সময় যেখানে মুখ্যমন্ত্রী নিজের প্রিয় পাত্র হিসেবে দলের তাঁবর তাঁবর নেতাদের সঙ্গে ওঠাবসা। নেতা মন্ত্রী সকলে রয়েছেন সেট তালিকায়। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকে স্থান পাননি তারা। একসময় যাদের পরিচয়টাই ছিল তৃণমূলের বড় নেতা কিংবা উপরতলার মন্ত্রী হিসেবে ছিল, তাঁদের মধ্যে কেউই ডাক পেলেন না মুখ্যমন্ত্রীর এই বৈঠকে? দেড় ঘন্টার বৈঠকে কয়েক মিনিটের জন্য হলেও স্থান ছিল না এই সকল বড় বড় নেতা মন্ত্রীদের। ঠিক যেন ঠুঠো জগন্নাথ করে বসিয়ে রাখা হলো। তাহলে এর থেকে ভালই বোঝা যাচ্ছে, দলীয় কোন সিদ্ধান্ত হোক কিংবা সরকার চালানোর ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত সব ক্ষেত্রেই অভিষেকের মতামত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আগে। কিন্তু বাকি রাও তো দলটা সেই দীর্ঘদিন ধরে করছেন! কেনো তাঁরা জায়গা পেলেন না? সে এক বড় প্রশ্ন। তৃণমূলের অন্দরে যে রদবদল হবেই, তা বাস্তবায়ন শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা।