প্রচার ও জনসংযোগে বরাবরই পারদর্শী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দেশবাসীর চাহিদা ও মনস্তত্ত্ব বোঝার ক্ষমতায় তিনি বারবার রাজনৈতিক সাফল্য অর্জন করেছেন। তবে এবার তিনি শুধু রাজনীতি নয়, স্বাস্থ্যের বিষয়েও পরামর্শ দিলেন। স্থূলত্ব ও হৃদরোগের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে দেশবাসীকে তিনি বললেন— “তেল খাওয়া কমান!”
ভারতে ডায়াবিটিস ও স্থূলত্বের হার দিন দিন বাড়ছে। শুধু প্রবীণরাই নন, তরুণ-তরুণীদের মধ্যেও ডায়াবিটিস ও হৃদরোগের প্রবণতা উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) তথ্য অনুযায়ী, ভারতে ১৮ বছর বয়সিদের মধ্যে ডায়াবিটিস আক্রান্তের সংখ্যা ৭.৭ কোটি। এছাড়া, দেশে প্রি-ডায়াবিটিস আক্রান্তের সংখ্যাও লক্ষাধিক। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ডায়াবিটিসে আক্রান্ত হওয়ার হারে বিশ্বে ভারত দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে, যেখানে প্রথম স্থানে রয়েছে চীন।
এছাড়া, ভারতের হৃদরোগজনিত মৃত্যুর হারও চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০২৩ সালের অক্টোবরে প্রকাশিত এক সমীক্ষা অনুযায়ী, দেশে ৪০-৬৯ বছর বয়সিদের মোট মৃত্যুর ৪৫% হৃদরোগজনিত কারণে ঘটে।
ন্যাশনাল গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ‘ফিট ইন্ডিয়া’ সম্পর্কিত বক্তৃতায় মোদী বলেন, “সুস্থ থাকতে হলে দুটি বিষয় মেনে চলুন— প্রতিদিন শরীরচর্চা করুন এবং খাবারে তেলের পরিমাণ কমান।”
তিনি আরও বলেন, “যে পরিমাণ তেল আমরা প্রতিদিন খাই, সেটি মাসিক হিসাবে হিসাব করুন এবং ১০% কমিয়ে দিন। এভাবে ছোট ছোট পরিবর্তন আনলেই জীবনধারায় বড় পরিবর্তন আসবে।”
মোদীর পরামর্শের প্রসঙ্গে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. বলবীর সিংহ বলেন, “তেল আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয়, কারণ এটি কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাটি অ্যাসিড সরবরাহ করে যা মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। তবে অতিরিক্ত তেল গ্রহণ এবং অনিয়মিত জীবনযাত্রা হৃদরোগের কারণ হতে পারে।”
পুষ্টিবিদ ঋতু সমাদ্দার বলেন, “একজন সুস্থ মানুষের দিনে ২০-২৫ মিলিলিটার তেল প্রয়োজন, অর্থাৎ মাসে ৭৫০-৯০০ মিলিলিটার। কিন্তু ভারতে সাধারণত একজন ব্যক্তি এক লিটারের বেশি তেল গ্রহণ করেন। ডায়াবিটিস বা হৃদরোগে আক্রান্ত হলে এক মাসে ৫০০ মিলিলিটারের বেশি তেল খাওয়া উচিত নয়।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাইরের ভাজাভুজি ও প্যাকেটজাত খাবার খাওয়া এড়িয়ে চলাই সবচেয়ে ভালো, কারণ এতে ট্রান্সফ্যাট ও স্যাচুরেটেড ফ্যাট বেশি থাকে যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
পরিবর্তন আনতে হবে এখনই!
প্রধানমন্ত্রী মোদীর পরামর্শ মেনে চললে স্বাস্থ্যকর জীবনধারা গড়ে তোলা সম্ভব। শরীরচর্চা এবং সঠিক খাবার বেছে নেওয়ার মাধ্যমে ডায়াবিটিস ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো সম্ভব। এবার দেখার, মোদীর এই বার্তা কতটা প্রভাব ফেলে ভারতীয়দের খাদ্যাভ্যাসে!