বাজেটে মধ্যবিত্তদের জন্য সুখবর এলেও বিনিয়োগ ও শিল্পোন্নয়নে বিশেষ কোনও দিশা দেখালেন না অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। শনিবার, ১ ফেব্রুয়ারি পেশ হওয়া ২০২৫-’২৬ অর্থবর্ষের বাজেটে ব্যক্তিগত আয়ের উপর বিশাল করছাড়ের ঘোষণা হলেও বড় শিল্পের জন্য তেমন কিছুই নেই। বিশেষজ্ঞদের মতে, মনমোহন সিংহ বা অটলবিহারী বাজপেয়ীর আমলের অর্থনৈতিক সংস্কারের তুলনায় এবারের বাজেট নেহাতই সাদামাঠা।
অর্থমন্ত্রীর ঘোষণায় সবচেয়ে বড় স্বস্তি পেয়েছেন মধ্যবিত্তরা। ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বার্ষিক আয়ে কোনও কর দিতে হবে না বলে জানিয়েছেন তিনি। ফলে এক বিশাল অংশের মানুষের হাতে বেশি অর্থ থাকবে। কিন্তু সেই অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথ প্রশস্ত করবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। শিল্পপতিরা আশা করছিলেন নতুন লগ্নি টানতে কেন্দ্র কিছু বড় পদক্ষেপ নেবে, কিন্তু নির্মলা এ নিয়ে কার্যত নীরব রইলেন। গত চার বছরে সর্বনিম্ন হারে (৬.৪%) আর্থিক বৃদ্ধির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বিনিয়োগের গতি আনতে কোনও যুগান্তকারী ঘোষণা না থাকায় ব্যবসায়ীদের হতাশা বাড়িয়েছে।
এই বাজেটে কৃষি ও ক্ষুদ্রশিল্পের উন্নতির জন্য বেশ কিছু প্রকল্পের কথা বলা হয়েছে। ধন ধান্য কৃষি যোজনায় ১.৫ কোটি কৃষককে সুবিধা দেওয়া হবে। ভোজ্যতেলে স্বনির্ভরতা আনতে ছয় বছরের মিশন শুরু হচ্ছে। তুলো উৎপাদন বাড়াতে পাঁচ বছরের পরিকল্পনার কথাও ঘোষণা করেছেন নির্মলা। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য ক্রেডিট গ্যারান্টি ৫ কোটি থেকে ১০ কোটি টাকা করা হয়েছে, যা এই খাতের ব্যবসায়ীদের কিছুটা স্বস্তি দেবে।
মহিলাদের ক্ষমতায়নে বড় ঘোষণা এসেছে। তফসিলি জাতি ও উপজাতির পাঁচ লক্ষ মহিলা উদ্যোগপতিকে দু’কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়া হবে। অঙ্গনওয়াড়ি প্রকল্পের আওতায় মহিলাদের বিশেষ পুষ্টি প্রকল্পও ঘোষণা করা হয়েছে।
স্বাস্থ্যক্ষেত্রে বাজেট উৎসাহব্যঞ্জক। পাঁচ বছরে ৭৫ হাজার মেডিক্যাল আসন বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। ক্যানসার চিকিৎসার জন্য তিন বছরে ২০০০ ক্যানসার সেন্টার তৈরি করা হবে।
তবে ভারী শিল্পের ক্ষেত্রে একমাত্র বিমান পরিবহনেই বিনিয়োগের ঘোষণা এসেছে। ১২০টি নতুন বিমানবন্দর তৈরি হবে, যার মধ্যে বিহারে একাধিক প্রকল্প রয়েছে।
সাধারণ মানুষের জন্য কিছু স্বস্তির ঘোষণা এসেছে। ৩৬টি জীবনদায়ী ওষুধে শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে। অনলাইন ডেলিভারি কর্মীদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প চালু হবে। ষাটোর্ধ্বদের স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন এক লক্ষ টাকা করা হয়েছে।
এতসব সুবিধার পরেও বিশ্লেষকদের মতে, বিনিয়োগ ও দীর্ঘমেয়াদি বৃদ্ধির দিক থেকে বাজেট কিছুটা দিশাহীন। বড় শিল্পকে বাদ রেখে কেবল মধ্যবিত্তের ওপর নির্ভরতা অর্থনীতিকে কতদূর চাঙ্গা করবে, তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।