গঙ্গার তীরে ‘মৃত্যুর হোটেল’ নামে পরিচিত ভাসমান হোটেলগুলোর ইতিহাস বহু পুরনো। ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীতে একসময় এই ভাসমান হোটেলগুলো ছিল অভিজাতদের আড্ডাস্থল। তবে কালের বিবর্তনে সেগুলো এখন শ্রমজীবী মানুষের অস্থায়ী আবাসস্থলে পরিণত হয়েছে।
১৯৫৩ সালে শিল্পী মুর্তজা বশীরের আঁকা ‘ভাসমান হোটেল’ চিত্রে এই নৌকা-হোটেলগুলোর চিত্র ফুটে ওঠে। তৎকালীন সময়ে এগুলোতে কেবিন ভাড়া ছিল মাত্র পঁচিশ পয়সা। সত্তরের দশকেও এই হোটেলগুলোতে থাকার ব্যবস্থা ছিল কেবিনে, বাইরে ছিল খাবারের জায়গা। তখন খাবারের জন্য আলাদা খরচ দিতে হতো না; শুধু থাকার জন্য সামান্য ভাড়া দিলেই চলত।
বর্তমানে, বুড়িগঙ্গার তীরে এই ভাসমান হোটেলগুলোর সংখ্যা কমে এসেছে। যেগুলো টিকে আছে, সেগুলোও জীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। একসময় অভিজাতদের আড্ডাস্থল হিসেবে পরিচিত এই হোটেলগুলো এখন নিম্নবিত্ত শ্রমজীবী মানুষের অস্থায়ী আবাসস্থল। চারপাশের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তারা জীবনযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন।
ইতিহাস ও সংস্কৃতির ধারক এই ভাসমান হোটেলগুলোকে যদি আধুনিকতার স্পর্শে নান্দনিক ও স্বাস্থ্যসম্মত করে তোলা যেত, তাহলে ঢাকার পর্যটনশিল্প বিকশিত হওয়ার পাশাপাশি বুড়িগঙ্গা নদীও রক্ষা পেত। তবে বর্তমানে এই ঐতিহ্যবাহী হোটেলগুলো কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাওয়ার পথে।
গঙ্গার তীরে ‘মৃত্যুর হোটেল’ নামে পরিচিত এই ভাসমান হোটেলগুলোর ইতিহাস আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় নদীকেন্দ্রিক জীবনের এক সমৃদ্ধ অতীতের কথা, যা আজ শুধুই স্মৃতি।