ভারতীয় জনতা পার্টির এই উত্থান কিভাবে সম্ভব হলো?
অর্থ-ক্ষমতা-মদ না দুর্নীতি কে ডোবালো কেজরিকে?
দেখুন কি বলছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা
১৯৯৮ সালের পর থেকে দিল্লির বিধানসভায় একাধিকবার লড়াই করেও বিজেপি ক্ষমতার স্বাদ পায়নি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের নেতৃত্বে এবার সেই দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটল। বিজেপি বিপুল ভোটে দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হয়ে ২৭ বছরের রাজনৈতিক বনবাস কাটিয়ে দিল্লির মসনদে আসীন হলো।
এই জয় শুধু দিল্লির নয়, বরং ভারতের রাজনৈতিক সমীকরণেও এক নতুন মোড় আনতে চলেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
কিন্তু প্রশ্ন উঠছে কিভাবে সম্ভব হল এই জয়ের? মোদির জনপ্রিয়তা, যোগীর তীক্ষ্ণ আক্রমণাত্মক প্রচার কৌশল, কেন্দ্রীয় সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প এবং বিজেপির সুসংগঠিত নির্বাচনী প্রচারণা— সব মিলিয়ে দিল্লির জনতার মনে বিজেপির প্রতি আস্থা ফিরিয়ে এনেছে।
২০১৩ সালে কংগ্রেসের পতন ঘটলেও বিজেপি পুরোপুরি ক্ষমতায় আসতে পারেনি। আম আদমি পার্টি (আপ) তখন অরবিন্দ কেজরিওয়ালের নেতৃত্বে নতুন শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়।
কেজরিওয়ালের আপ প্রায় পুরোপুরি দিল্লির বিধানসভা দখল করে নেয়, বিজেপি কার্যত কোণঠাসা হয়ে পড়ে। কিন্তু এই বিধানসভা নির্বাচনে দৃশ্যপট বদলে যায়। মোদি ও যোগীর নেতৃত্বে বিজেপি এক ঐতিহাসিক জয় নিশ্চিত করলো।
এখানেই প্রশ্ন উঠছে কেন এত বছর দিল্লি বিজেপির নাগালের বাইরে ছিল?
বিজেপি দিল্লিতে দীর্ঘদিন ধরে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করলেও কংগ্রেস ও আপের দাপটে তারা কখনোই সফল হতে পারেনি।তার অন্য তম প্রধান কারণ
- দিল্লিতে বিজেপির কোনো শক্তিশালী মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী ছিল না, যা কেজরিওয়াল মতো নেতাদের বিরুদ্ধে বড়ো দুর্বলতা হয়ে দাঁড়ায়।
2.দিল্লির জনগণকে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ, পানি ও স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি আপের জনপ্রিয়তা বাড়িয়েছিল।
কিন্তু অবশেষে মোদীর মুকুটে নয়া পালক। মোদি ও যোগী এবার কৌশল বদলান। তারা দিল্লির নির্বাচনী প্রচারে জাতীয়তাবাদ, উন্নয়ন এবং হিন্দুত্ববাদী রাজনীতিকে সামনে নিয়ে আসেন। শুধু কি তাই? শুধুমাত্র এই কারণেই কি আপ এর ভরাডুবি হলো?
না এ ছাড়াও রয়েছে আরও কারণ
নরেন্দ্র মোদির জনপ্রিয়তা বিজেপির সবচেয়ে বড় সম্পদ। তাঁর নেতৃত্বে ভারত বিশ্ব মঞ্চে শক্তিশালী হয়ে উঠেছে, যা দিল্লির জনগণের মন জয় করেছে।
যোগী আদিত্যনাথ দিল্লির হিন্দু ভোটারদের একত্রিত করতে বড় ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁর আক্রমণাত্মক প্রচার কেজরিওয়াল ও কংগ্রেসের বিরুদ্ধে জনগণের ক্ষোভ বাড়িয়ে দেয়।
বিজেপির ‘সবার জন্য ঘর’, ‘আয়ুষ্মান ভারত’, মেট্রো সম্প্রসারণ, এবং ‘স্মার্ট সিটি’ প্রকল্প সরাসরি দিল্লির ভোটারদের মন জয় করেছে।
এছাড়াও কেজরিওয়ালের সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এবং কংগ্রেস-আপের দ্বন্দ্বও বিজেপির জয় সহজ করেছে।
দিল্লিতে আম আদমি পার্টির বিপর্যয় এবং অরবিন্দ কেজরিওয়ালের হারের পরেই বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন প্রবীণ সমাজকর্মী অন্না হাজারে৷ দাবি করলেন ক্ষমতা এবং অর্থই নাকি মাথা ঘুরিয়ে দিয়েছে কেজরিওয়ালের
এবারে একটা প্রশ্ন উঠে আসছে দিল্লির ভবিষ্যৎ কি? বিজেপি কি আদৌ ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবে?
বিজেপির জন্য দিল্লি দখল করা যতটা কঠিন ছিল, এটি ধরে রাখা আরও কঠিন।কারণ আপ ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবে। কেজরিওয়াল সহজে হার মানবেন না এবং আপ পরবর্তী নির্বাচনের জন্য নতুন কৌশল তৈরি করবে।
তবে এ প্রসঙ্গে বলতেই হয় গেরুয়া ঝড়ে যে ভাবে একের পর এক দল উড়ে যাচ্ছে। তাতে কি মমতাই পারেন একমাত্র নরেন্দ্র দামোদর মোদির বিজয়যাত্র আটকাতে? তৃণমূল কিন্তু এমনটাই মনে করছে। এখন দেখার বিষয়, ভবিষ্যৎ রাজনীতি কোন দিকে মোড় নেয়।