সরস্বতী পুজো বন্ধের অভিযোগে রাজ্য বিধানসভায় সোমবার প্রবল উত্তেজনা ছড়াল। বিজেপি বিধায়করা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চেয়ে মুলতুবি প্রস্তাব আনেন, তবে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় তা খারিজ করে দেন। এরপরই বিজেপি বিধায়কদের বিক্ষোভ চরমে ওঠে। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীসহ একাধিক বিজেপি বিধায়ক ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখান। পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠলে শুভেন্দু অধিকারীসহ বেশ কয়েকজন বিজেপি বিধায়ককে এক মাসের জন্য বিধানসভা থেকে সাসপেন্ড করা হয়।
বিধানসভা থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে শুভেন্দু অধিকারী রাজ্য সরকারকে তীব্র আক্রমণ করেন। তিনি বলেন, “এই সরকার সংবিধান মানে না, সংখ্যালঘু তোষণ করছে। ব্রিটিশ আমলেও সরস্বতী পুজো বন্ধ হয়নি, অথচ এখন এই রাজ্যে তা রোখার চেষ্টা চলছে। আমরা হিন্দুদের ভোটে জিতে এসেছি, তাঁদের স্বার্থ রক্ষা করাই আমাদের দায়িত্ব। সে কারণেই সাসপেন্ড হওয়ায় আমরা গর্বিত।”
শুভেন্দু আরও ঘোষণা করেন, বিধানসভার সাসপেনশনের মেয়াদ চলাকালীন বিজেপি বিধায়করা বিধানসভার গেটে বিক্ষোভ চালিয়ে যাবেন এবং মুখ্যমন্ত্রী যখনই বিধানসভায় আসবেন, তাঁকে বয়কট করা হবে। পাশাপাশি, বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণের পালটা ভাষণ বিধানসভার বাইরেই দেবেন বিরোধী দলনেতা।
সরস্বতী পুজো বন্ধ নিয়ে রাজ্য জুড়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বিজেপির দাবি, ইসলামি চরমপন্থীদের চাপে বিভিন্ন স্কুলে সরস্বতী পুজো বন্ধ করা হচ্ছে। বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল বিধানসভায় এই অভিযোগ তোলেন এবং সরকারকে বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করেন। তবে স্পিকার সেই প্রশ্নের অনুমতি দেননি, যার ফলে বিজেপি বিধায়করা প্রতিবাদে মুখর হন।
শুভেন্দু অধিকারী অভিযোগ করেন, “নগরউখড়ায় তৃণমূলের বুথ সভাপতি আল আমিন মণ্ডল এক হেডমাস্টারকে সরস্বতী পুজো বন্ধ করতে হুমকি দিয়েছেন, অথচ তাঁর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এর ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে ধর্মীয় বৈষম্য তৈরি হচ্ছে।”
এই ঘটনা ঘিরে রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। বিজেপি রাজ্য জুড়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেস অবশ্য বিজেপির এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে এবং বলেছে, “রাজ্যে কোনও ধর্মীয় অনুশীলনে বাধা নেই। বিজেপি পরিকল্পিতভাবে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়ানোর চেষ্টা করছে।”
এখন দেখার, বিধানসভা থেকে সাসপেনশনের পর বিজেপি কীভাবে তাদের আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে যায় এবং রাজ্য সরকার এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে কী পদক্ষেপ নেয়।