অভিজিৎ বসুর কলমে :-
শূন্যের গেরো কাটবে কি না সেটা ঠিক জানা নেই, একের পর ভোটে রক্তক্ষরণ বন্ধ হবে কি না সেটাও ঠিক জানা নেই তবুও সাম্য প্রতিষ্ঠার ডাক দেওয়া সিপিএমের তিনদিনের ২৭ তম রাজ্য সম্মেলন শনিবার থেকে শুরু হলো ডানকুনিতে। সর্বহারা পার্টির এই সম্মেলন ঘিরে এখন একদা লাল দুর্গ হুগলী জেলা জুড়ে বেশ উৎসবের একটা চেহারা দেখা যাচ্ছে। আর এই সর্বহারার সম্মেলনে খরচ হচ্ছে অনেক। প্রায় নাকি কোটি টাকার বাজেট শোনা যাচ্ছে এই সম্মেলনে। তাতে আর ক্ষতি কি দল নাই বা থাক ক্ষমতায়, দীর্ঘদিন দলের নেতাদেরকে এনে রাজ্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত করে দলকে চাঙ্গা করতে হবে তো না হলে ২০২৬ এর ভোটে লড়াই হবে কী করে। প্রায় পনেরোটি বেশি হোটেলে প্রতিনিধিদের রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। লাঞ্চ আর ডিনার এও বেশ নতুন পদের আস্বাদ মিলবে এই বারের লাল পার্টির সম্মেলনে। মেনুতে থাকছে হুগলীর বিখ্যাত মিষ্টি মনোহরা, জল ভরা সন্দেশ, রাবড়ি গ্রামের রাবড়ি সহ আরও নানা পদ। ২০১১ সালে রাজ্যপাট হারানোর পর একের পর এক নির্বাচনে বিপর্যয়ের ধাক্কায় রক্তশূন্য পার্টির দুর্দিনে কার্যত চারদিন ধরে চিন্তা-মন্থনের পিছনে কেন এত আড়ম্বর, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে পার্টির অন্দরেই।
তবে এসব প্রশ্নে কান না দিয়ে সম্মেলনের দায়িত্বে থাকা হুগলি জেলা পার্টি আবার অতিথি কমরেডদের আতিথেয়তায় কোনও খামতি রাখতে চাইছে না একদম। চন্দননগরের জলভরা থেকে চণ্ডীতলার গুড়ের মিষ্টি, জনাইয়ের মনোহরাও থাকতে চলেছে নেতাদের ব্রেকফাস্ট থেকে লাঞ্চ-ডিনারে। আবার আনার ব্যবস্থা হচ্ছে প্রসিদ্ধ রাবড়ি গ্রামের সুস্বাদু রাবড়িও। এদিকে, সংবাদ মাধ্যমের কাছে দলের ভিতরের খবর পৌঁছনো আটকাতে সিরিয়াল নম্বর ও কোডিং-সহ খসড়া দেওয়া হচ্ছে রাজ্য সম্মেলনের প্রতিনিধিদের। থাকছে না পিডিএফও। ছবি-সহ থাকছে প্রতিনিধিদের আইডি কার্ডও। সে যে ব্যবস্থা হোক ক্ষতি কি দলের এই রক্তক্ষরণ বন্ধ হলেই ভালো।
হুগলির ডানকুনির কোল কমপ্লেক্সের শান্তিমঞ্চে সিপিএমের রাজ্য সম্মেলনে উদ্বোধনী ভাষণ দেবেন সিপিএমের পলিটব্যুরোর সদস্য প্রকাশ কারাট ও রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। ২৫ ফেব্রুয়ারি ডানকুনি ফুটবল মাঠে প্রকাশ্য সমাবেশ। উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গ মিলিয়ে প্রায় ৫০০ প্রতিনিধি আমন্ত্রিত। খরচে কোনও খামতি রাখছে না সিপিএমের নেতারা। দিল্লি রোড ও দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের ধারে গোটা ১৫ হোটেল, লজ ও গেস্ট হাউস ভাড়া নেওয়া হয়েছে। সম্মেলন স্থলে পৌঁছতে স্টেশন থেকে রাখা হয়েছে গাড়ির ব্যবস্থাও। একদম ঠিক যেনো বদলে যাওয়া সিপিএমের পার্টির নতুন কিছু করে দেখানোর আপ্রাণ চেষ্টা একটা।
বিধানসভা ও লোকসভায় বঙ্গ সিপিএম একদম শূন্য। দলে রক্তক্ষরণ অব্যাহত। ঘুরে দাঁড়ানোর মরিয়া চেষ্টা করছে বঙ্গ সিপিএম। কিন্তু তারপরও পার্টির রোগমুক্তি হচ্ছে না কিছুতেই। ফিরছে না হারিয়ে যাওয়া ভোটও কোনোও ভাবেই। সিপিএমের তরুণ প্রজন্মের বড় অংশই শুধুমাত্র ফেসবুকে ‘বিপ্লবী’। তাছাড়া, তরুণ প্রজন্মকে সামনে এনেও গত লোকসভা নির্বাচনে প্রায় সব প্রার্থীরই জমানত জব্দ হয়েছে। ফলে ঘুরে দাঁড়ানোর ওষুধ খুঁজতেই মূলত আলোচনা হবে এই সম্মেলনে।
কিন্তু পার্টির দুর্দিনে বড় মঞ্চ, একাধিক হোটেল ভাড়া করে চারদিনের সম্মেলন করা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। এই রাজ্য সম্মেলন থেকেই যে রাজ্য কমিটি গঠন হবে, সেই নেতৃত্বই ২০২৬-এর ভোটে পার্টির সেনাপতি। ফলে নয়া রাজ্য কমিটি কীভাবে সাজানো হয়, তা নিয়ে কৌতূহল রয়েছে বাম মহলে। কারণ, গতবার তরুণ প্রজন্মকে প্রাধান্য দিয়ে রাজ্য কমিটি করে সিপিএম চমক দিলেও ভোটের ময়দানে তাতে কোনও লাভ হয়নি পার্টির। আর তাই এইবার কি করে সেদিকে তাকিয়ে আছে সবাই।
রক্ত পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে শুরু হলো ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য ২৭তম সম্মেলন। কমরেড সীতারাম ইয়েচুরি মঞ্চ
কমরেড বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য নগর (ডানকুনি)
পতাকা উত্তোলন করেন প্রবীণ পার্টি নেতা বিমান বসু। শহীদ বেদীতে মাল্যদান করেন পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য প্রকাশ কারাত, মানিক সরকার, বৃন্দা কারাত, সূর্যকান্ত মিশ্র, এম এ বেবি, তপন সেন, অশোক ধাওয়ালে, নীলোৎপল বসু, রামচন্দ্র ডোম, পার্টি নেতা হান্নান মোল্লা, অভ্যর্থনা কমিটির সভাপতি মিতালী কুমার, অভ্যর্থনা কমিটির সম্পাদক দেবব্রত ঘোষ, সকল প্রতিনিধি ও দর্শকদের পক্ষ থেকে পলিটব্যুরো সদস্য তথা পার্টির রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম।
এখন এতসব নেতাদের উপস্থিতি আর মত বিনিময় আর চিন্তন শিবির করে কি হারানো দিনের গৌরব ফিরে পাবে? লাল পার্টির লাল রক্ত পলাশ কি আবার ফুটবে গোটা রাজ্য জুড়ে, না কি ঘাসফুলের জমানায় লাল ক্রমাগত ফিকে হয়েই বিরাজ করবে এইভাবেই, এই পার্টির দুর্দিনে শূন্যদশা কাটবে কি? সেটাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন।