সমীর ঘোষের কলমে
একদিকে কট্টর জাতীয়তাবাদীদের উত্থান আর অন্যদিকে মধ্য-বামপন্থী ‘সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটস’দের ক্রমশ জনপ্রিয়তা হারানো, এমন পরিস্থিতিতে রবিবার মধ্য ইউরোপের বড় দেশ জার্মানির নির্বাচন ছিল এই মুহূর্তে ইউরোপে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।ফলে জার্মানিতে কারা ক্ষমতায় আসছে, তা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল ইউরোপ, আমেরিকার ক্ষমতাধরদের কাছে। তবে রবিবার পরিবর্তনের পক্ষেই ভোট দিয়েছে জার্মানির মানুষ। জার্মানির জাতীয় নির্বাচনে রক্ষণশীল জোট জয়লাভ করেছে, এবং ফ্রিডরিখ ম্যার্ৎস জার্মানির পরবর্তী চ্যান্সেলর হতে যাচ্ছেন।
জার্মানির নির্বাচন ব্যবস্থায় প্রতিটি ভোটার দুটি ভোট দেন। প্রথমে একটি সংসদ সদস্য এবং পরে একটি রাজনৈতিক দলের জন্য। দ্বিতীয় ভোটের মাধ্যমে সংসদে দলগুলোর অনুপাত নির্ধারিত হয়। একটি দল যদি ৫ শতাংশ বা তার বেশি ভোট পায়, তবে তারা সংসদে আসন পেতে সক্ষম হয়। নির্বাচনী সমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল ক্রিশ্চিয়ান গণতান্ত্রিক দল (সিডিইউ) ও তাদের সহযোগী দল ক্রিশ্চিয়ান সামাজিক দল (সিএসইউ) এগিয়ে রয়েছে। তারা কট্টর ডানপন্থি এএফডির তুলনায় প্রায় ১০ শতাংশ এগিয়ে ছিল।বুথ ফেরত সমীক্ষা অনুযায়ী, ম্যার্ৎসের ‘ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়ন- ক্রিশ্চিয়ান সোশ্যাল ইউনিয়ন’ জোট কমপক্ষে ২৮.৫ শতাংশ ভোট পেয়েছে।
তবে এবারের ভোটে ডানপন্থী অল্টারনেটিভ ফর জার্মানি (এএফডি)র রেকর্ড উত্থান এবং দ্বিতীয় স্থান দখল খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে জার্মান রাজনীতিতে।মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বন্ধু ও ধনীতম এলন মাস্কের মতো মার্কিন ব্যক্তিত্বদের সরাররি সমর্থন পাওয়া এই দলের অগ্রগতি চোখে পড়ার মত। এখনও কুঁড়ে কুঁড়ে খাওয়া নাৎজি ইতিহাসের জার্মানিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে এ বারই অতি ডানপন্থীদের জন্য সেরা ফলাফল।‘অলটারনেটিভ ফর জার্মানি’ বা ‘এএফডি’ এ বার ১৯.৫ শতাংশ ভোট পেয়েছে।
তবে অতি ডানেরা ক্ষমতায় না আসতে পারলেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নির্বাচনের ফলাফলকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন যে জার্মানির জনগণ ওলাফ শোলৎসের নেতৃত্বাধীন মধ্য-বামপন্থী সরকারের ‘ সাধারণ জ্ঞানের অভাব’ থাকা নীতিগুলিকে প্রত্যাখ্যান করেছে। ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, ” মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো, জার্মানির মানুষও শক্তিশালী সাধারণ জ্ঞানের অভাব, বিশেষ করে শক্তি এবং অভিবাসন নিয়ে, যা বহু বছর ধরে চলছে, তা নিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। এটি জার্মানির জন্য একটি মহান দিন।”
তবে জয় পেলেও অতি ডানপন্থীদের থেকে সতর্ক থাকা সরকার গঠনের প্রস্তুতি নেওয়া ফ্রিডরিখ ম্যার্ৎস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ‘সত্যিকারের স্বাধীনতা’ দাবি করেছেন। তিনি ওয়াশিংটন থেকে উড়ে আসা চূড়ান্তভাবে বিস্ময়কর মন্তব্যের সমালোচনা করেছেন এবং একে রাশিয়ার শত্রুতা পূর্ণ হস্তক্ষেপের সঙ্গে তুলনা করেছেন। ফ্রিডরিখ ম্যার্ৎসের দাবি এখন আমরা দুই দিক থেকে বড় চাপের মধ্যে আছি। অন্যান্য নেতাদের সঙ্গে একটি গোলটেবিল বৈঠকে তিনি বলেছেন, “এখন আমার একমাত্র অগ্রাধিকার হল ইউরোপে ঐক্য অর্জন করা।”
চ্যান্সেলর শোলৎসের সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটস (এসপিডি) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তাদের সবচেয়ে খারাপ ফলাফলে নেমে এসেছে। তাদের ঝুলিতে এসেছে প্রায় ১৬ শতাংশ ভোট। নয়া সরকারে চ্যান্সেলর শোলৎসের কোনও ভূমিকা থাকবে না বলে মনে করা হচ্ছে। এ ছাড়া, অতি-বামপন্থী দল ‘ডাই লিংক’ এ বারের নির্বাচনে ৮.৫ শতাংশ এবং বামপন্থী রক্ষণশীল দল হিসেবে পরিচিত, নবাগত ‘বিএসডব্লু’ ৪.৭ শতাংশের মতো ভোট পেয়েছে। অন্তত ৫ শতাংশ ভোট না পেলে জার্মান সংসদে আসন পেতে পারে না।