দিঘার সৈকতের ঢেউয়ের মাঝে এবার প্রতিফলিত হবে পুরীর আভা! মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিকল্পনায় দিঘায় মাথা তুলেছে জগন্নাথ মন্দির, যা দেখতে অবিকল পুরীর জগন্নাথ ধামের মতোই। আগামী অক্ষয় তৃতীয়ার দিন এই মন্দিরের দ্বার খুলবে ভক্তদের জন্য। ২০ একর জমির উপর নির্মিত এই মন্দির ইতিমধ্যেই ভক্ত ও পর্যটকদের কৌতূহলের কেন্দ্রে।
পুরীতে যেমন মন্দিরের চত্বরজুড়ে একাধিক দেবদেবীর মন্দির রয়েছে, তেমনই দিঘার মন্দির চত্বরে থাকবে ছোট ছোট বেশ কিছু মন্দির। রাধা-কৃষ্ণ ও বিমলা মন্দির থাকছে প্রধান মন্দিরের সাথেই। রাজ্যের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় স্থাপত্যে পরিণত হতে চলেছে এই প্রকল্প। রাজ্য সরকার এই মন্দির নির্মাণে ২৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে এবং হিডকোর তত্ত্বাবধানে চলছে নির্মাণকাজ। ইতিমধ্যেই শতাধিক শ্রমিক দিনরাত পরিশ্রম করে মন্দিরের গঠন প্রায় সম্পূর্ণ করে ফেলেছেন।
মন্দিরের মূল অংশে থাকবে রাজস্থানের শ্বেতপাথরের তৈরি জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার মূর্তি। জানা গিয়েছে, রাজস্থানের বংশী পাহাড়ের বিখ্যাত বেলেপাথরে তৈরি হচ্ছে মন্দিরের কাঠামো। এছাড়াও, পুরীর মতোই এখানে থাকবে কাঠের মূর্তি, যা বিশেষ আচার-অনুষ্ঠানে ব্যবহার করা হবে। মন্দিরের কাছেই ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে ‘চৈতন্যদ্বার’, যেখানে থাকবে মহাপ্রভু চৈতন্যদেবের এক বিশাল মূর্তি।
পুরীর রীতি মেনেই দিঘার মন্দিরে প্রতি বছর পালিত হবে জগন্নাথদেবের রথযাত্রা। পুরীর মতোই দিঘার মন্দিরের চূড়ায় প্রতিদিন পালিত হবে ধ্বজা বদলের প্রথা। ভক্তদের সুবিধার্থে জগন্নাথ মন্দিরের কাছে দুটি স্নানের ঘাটও নির্মাণ করা হচ্ছে, যাতে সমুদ্রস্নান সহজ হয়।
সোনার ঝাঁটা রীতিও থাকছে দিঘার মন্দিরে। পুরীতে রাজপরিবারের উদ্যোগে রথযাত্রার আগে সোনার ঝাঁটা দিয়ে রাস্তা পরিষ্কার করার প্রথা রয়েছে। সেই ধারা বজায় রেখে দিঘার মন্দিরেও ব্যবহৃত হবে সোনার ঝাঁটা, যা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই ৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে উপহার দিয়েছেন।
তবে কিছু পার্থক্যও থাকছে। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে প্রসাদ হিসেবে ‘খাজা’ দেওয়া হয়, কিন্তু দিঘার মন্দিরে ভক্তদের জন্য প্রসাদ হিসেবে থাকবে ‘গুজিয়া’ ও ‘পেড়া’।
এই মন্দির নির্মাণকে ঘিরে রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে। বিরোধীদের অভিযোগ, এটি শুধুমাত্র পর্যটন ব্যবসার প্রসারের জন্য তৈরি হচ্ছে। তবে রাজ্য সরকারের দাবি, এটি একটি ‘কালচারাল সেন্টার’, যেখানে ধর্মীয় ঐতিহ্যের সঙ্গে সংস্কৃতির মেলবন্ধন হবে।
এই প্রকল্পের ফলে দিঘার ধর্মীয় ও পর্যটন মানচিত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বাঙালির আবেগের শহর দিঘা এবার শুধু সমুদ্র নয়, ‘জগন্নাথ দর্শন’-এর জন্যও এক বড় আকর্ষণ হয়ে উঠতে চলেছে!